সামনেই লোকসভা নির্বাচন। সেই মহারণের জন্য সম্প্রতিই রাজ্যে জোড়ে এসেছিলেন অমিত শাহ এবং জেপি নড্ডা। অতীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতির যৌথ উপস্থিতিতে কখনওই বিজেপির বৈঠক হয়নি বাংলায়। সেই বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি হাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখন দলের কোনও পদে না থাকলেও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও ছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকে শাহ-নড্ডাদের নির্দেশে রাজ্যের নির্বাচন পরিচালন কমিটির প্রথম বৈঠকেই গরহাজির শুভেন্দু এবং দিলীপ।
লোকসভা নির্বাচনকে ‘মহারণ’ হিসাবে গোটা দেশই দেখছে। দলের অনেকেই বলছেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর ‘হ্যাটট্রিক’ করার লক্ষ্য নিয়েই এই ভোট। যাতে ৪০০-র বেশি আসন পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। কেউ কেউ এটাও বলছেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে এটাই মোদীর শেষ ভোট। ফলে দলকে বড় আসন নিয়ে আসতে হবে। আর সেই লক্ষ্য বাংলাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য থেকে ৩৫ আসন জয়ের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন শাহ। সেই স্বপ্নপূরণ হবে দাবি করে প্রতি দিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও কর্মসূচিতে হাজির থাকছেন শুভেন্দু। তবে সাংসদ দিলীপ মূলত নিজের লোকসভা এলাকা মেদিনীপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন নিজেকে। তবে তাঁর মুখেও ৩৫ আসন জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে তৈরি রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠকের দিনেই এলেন না কেন তাঁরা? দু’জনের গরহাজিরা নিয়ে বিজেপির মধ্যেই চলছে জল্পনা।
বিজেপি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল ৯ জানুয়ারি দলের নির্বাচন পরিচালন কমিটি ঘোষণা হবে। সেই কমিটিতে যাঁরা থাকবেন তাঁদের নিয়েই নিউ টাউনের একটি হোটেলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেখানে রাজ্য নেতাদের পাশাপাশি রয়েছেন রাজ্য দলের পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। বৈঠক শুরু হয় বেলা ১১টা থেকে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দু সোমবার রাতে শুভেন্দু এবং দিলীপ কলকাতাতেই ছিলেন। দিলীপ সকালেই চলে যান গঙ্গাসাগরে। আর দুপুরের পরে শুভেন্দু যান দেগঙ্গায়।
দুই নেতা দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনায় যে যাবেন তা অবশ্য দল জানে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে শতাধিক সদস্য নিয়ে তৈরি নির্বাচন পরিচালন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেই রয়েছেন শুভেন্দু ও দিলীপ। বৈঠকে গরহাজিরা নিয়ে দলের পক্ষে জানানো হয়েছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতেই তাঁরা বৈঠকে থাকতে পারেননি। যদিও দলেরই একটি অংশ বলছে, শুভেন্দু দেগঙ্গায় যাওয়ার আগে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বৈঠকে আসতেই পারতেন। অন্য দিকে, দিলীপের গঙ্গাসাগর যাত্রা মূলত ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই। যার জন্য মঙ্গলবারের পরিবর্তে যে কোনও দিন বাছতেই পারতেন।
বৈঠকে না থাকার কারণ নিয়ে শুভেন্দু বা দিলীপ নিজের থেকে এখনও পর্যন্ত কিছু বলেননি। তবে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলকে জানিয়েই দু’জন দুই ২৪ পরগনায় গিয়েছেন। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা থামছে না। শুভেন্দুর না থাকা নিয়ে তাঁর অনুগামী হিসাবে পরিচিত এক রাজ্য বিজেপির নেতা বলেন, ‘‘দলের কোন কাজে তাঁর থাকা উচিত সেটা বিরোধী দলনেতা বোঝেন। বৈঠক করার থেকে দেগঙ্গায় বুথ কর্মীদের সম্মেলনে থাকাটা শুভেন্দুদা জরুরি মনে করেছেন। আর তিনি ঘরে বসে বৈঠক করার চেয়ে মাঠে নেমে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন।’’ যদিও রাজ্য বিজেপির অন্য একটি অংশের বক্তব্য, ডাকা হলেও বেশির ভাগ বৈঠকেই বিরোধী দলনেতা আসেন না। অবশ্যই আসেন শুধু কেন্দ্রীয় নেতারা ডাকলে।’’
অন্য দিকে, দিলীপ অনুগামীদের বক্তব্য, অনেকটা দেরিতে জানানোর জন্য মঙ্গলবারের কর্মসূচি বদল করা যায়নি। গঙ্গাসাগরে স্বচ্ছ ভারত মিশনের যে শিবির হয়েছে তার উদ্বোধনে যাওয়ার কথা অনেক আগেই ঠিক হয়েছিল। তবে এমন আলোচনাও বিজেপিতে চলছে যে, নিজের কেন্দ্রের বাইরে বিশেষ দায়িত্ব নিতেই চাইছেন না দিলীপ। নিজের জয় নিশ্চিত করাই তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। প্রসঙ্গত, দলের যাবতীয় দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পরে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে এমন অভিমানের কথা বলেওছিলেন।