আগামিদিনে তালিবান কীভাবে সরকার চালাবে, সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে সেই আভাস দিয়েছে তালিবান নেতৃত্বের ঘনিষ্ট ওয়াহিদুল্লাহ হাসিমি। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কাউন্সিল তৈরির দিকেই তালিবান ঝুঁকে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তালিবানি আমলে নীতি-নির্ধারক ছিল মোল্লাহ ওমর। কিন্তু কখনও সামনে আসেনি। একটি কাউন্সিল তৈরি করে শাসন চালাত।
সেনাবাহিনী
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা জানিয়েছে হাসিমি। তার বক্তব্য, আফগান সেনার কর্মকর্তা এবং যুদ্ধবিমানের পাইলটদের নতুন প্রশাসনে যোগ দেওয়ার আবেদন জানাতে পারে তালিবান। এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তালিবান মনে করে, আফগান বাহিনীর সঙ্গে তালিবান যোদ্ধাদের মিশিয়ে একটি নতুন সেনাবাহিনী তৈরি করা দরকার। বস্তুত, তালেবান গেরিলা যুদ্ধে করলেও তাদের কোনও বিমান বাহিনী নেই। তালিবান পাইলটও নেই। ফলে আফগান বাহিনী থেকেই বিমানবাহিনী তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আত্মসমর্পণ করা আফগান সেনাদের থেকেও দক্ষ অফিসারদের নতুন বাহিনীতে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
আফগান বাহিনীর কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ব্রিটেন, জার্মানি এবং তুরস্কে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেই প্রশিক্ষণ নতুন বাহিনীতে কাজে লাগবে বলেই মনে করছে তালিবান। পাশাপাশি গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক বিদেশি বেস তারা নিজেদের দখলে নিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জার্মান ঘাঁটি এবং মার্কিন ঘাঁটি। সেখানে অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমানও দখল করেছে তারা। সেই সমস্ত আধুনিক বিমানের জন্য প্রশিক্ষিত পাইলট প্রয়োজন। আফগান বাহিনী থেকেই সেই পাইলটদের পাওয়া যাবে বলে মনে করছে তারা। তবে বাহিনীতে কেবল আফগান বাহিনীর সেনা রাখা হবে না। যথেষ্ট পরিমাণে তালিবান ‘যোদ্ধাও’ মোতায়েন করা হবে। যাতে নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে সেনাবাহিনী।
গণতন্ত্র নয়
নতুন আফগানিস্তানে গণতন্ত্রের কোনও জায়গাই থাকবে না বলে স্পষ্ট করেছে হাসিমি। জানিয়েছে, মূলত শরিয়ত আইনের উপরেই গড়ে উঠবে শাসনব্যবস্থা। তবে সেই ব্যবস্থা গত তালিবান শাসনের মতো হবে কিনা, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও মন্তব্য করেনি হাসিমি। অদূর ভবিষ্যতে তা স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে। তবে কাউন্সিল তৈরির বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হাসিমি। তার বক্তব্য, তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা সুপ্রিম লিডার হিসেবে সরকারের প্রধান হবে। কিন্তু সম্ভবত প্রেসিডেন্ট হবেন না। প্রেসিডেন্ট করা হতে পারে আখুন্দজাদার ডেপুটিদের। এই মুহূর্তে আখুন্দজাদার তিনজন ডেপুটি আছে। মোল্লাহ ওমরের ছেলে মৌলভি ইয়াকুব, হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং দোহায় তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান আবদুল গনি বরাদার। মঙ্গলবার ২০ বছর পর তিনি কান্দাহারে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, তালিবান যে নতুন সরকার গঠন করতে চলছে, তার মডেল হবে খানিকটা ইরানের মতো। সুপ্রিম লিডারের কাছে সকলে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তার নীচে থাকবে প্রেসিডেন্ট এবং তার নীচে কাউন্সিল। অন্যদিকে যে সেনাবাহিনী তৈরি হবে সেখানেও দুটি ভাগ থাকতে পারে। একদিকে সুপ্রিম লিডারের তত্ত্বাবধানে রেভোলিউশনারি গার্ডের মতো বাহিনী এবং অন্যদিকে সাধারণ সেনাবাহিনী। সুপ্রিম লিডারের সেনা হবে মূলত তালিবান ‘যোদ্ধাদের’ নিয়ে। সাধারণ সেনা বাহিনীতে বর্তমান আফগান ফৌজের সেনাদের যুক্ত করা হবে।