পাঠ্যে পুরনো ইতিহাসের ধারার বদলে বাস্তব ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ অচিন্ত্য বিশ্বাস। তাঁর মতে, “ইতিহাস কাকে বলে? ঘটনার পরম্পরা? তথ্য? সূত্র সহ তথ্যের অরণ্যে ঘুরপাক খাওয়া?”
ইতিহাস-বিতর্কে ফেসবুকে অচিন্ত্যবাবু লিখেছেন, “যত অতীত তত তথ্য কম। ক্রমশ যুগান্তর আসে — ইতিহাসে চালান ও চোলাই হয় আক্রমণকারিদের ঢাকের আওয়াজ। আড়াল হয় প্রকৃত ইতিহাস।
প্রত্যেক জাতির ইতিহাস তাদের নিজস্ব নির্মাণ। স্মৃতির ইতিহাস, মগ্ন চৈতন্যে তা খেলা করে। তুমি কে হে পাঠ্যপুস্তক- রচয়িতা? দেশ সম্পর্কে চেতনা হীন, তথ্যের অরণ্যের কারবারি? ইতিহাস ওখানে নেই।
ইতিহাস থাকে স্বপ্নে, আদর্শে, নিজস্ব ধ্যান-লোক নির্মাণ ও অর্জনের জায়মানতায়। ধরো, নর্মান-স্যাকসান মিলে মিশে বৃটিশ জাতির গঠন, এই রাজনৈতিক পটভূমিই তো বৃটিশ ইতিহাস। তারপর তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার, অন্য ইতিহাস। রাজনীতি কূটনীতি আর বাণিজ্য।
ভারতের ইতিহাস তো দেশী আর আগন্তুক সমাজের (আগেকার বৃটিশ ঐতিহাসিক প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য: আর্য অনার্যের) ঘুরপাক দ্বন্দ্ব দ্বৈরথ আর মিলন মিশ্রণের টানাপোড়েন। এখানে যারা মিশতেই চায় না, রক্তে ভেজা আমাদের (ওদের নয়) প্রিয় মাতৃভূমির বুকে একমাত্রিক ধারণা চাপিয়ে তরবারির হুঙ্কার দেয়। বিজাতীয় মরুভূমির ঘৃণ্য মাতৃজাতি- বিদ্বেষ, সব কিছুকে একরঙা করার ধ্বংসাত্মক বর্বরতা আমাদের ইতিহাসের প্রধান অংশ? হয়? হওয়া উচিত?
তাহলে বুদ্ধদেব মহাবীরের অন্য মতের সঙ্গে বিতর্কের কালান্তরের সন্ধ্যা পার হলাম কোন শক্তিতে? আর তাই, মহামিলনের মহামন্ত্র দিলেন যাঁরা — রামানন্দ- রুইদাস -নানক- কবীর -দাদু -তুকারাম -চৈতন্য- নাভাজী- মীরা- আরুণ্ডেল -বাসবা -নারায়ণ গুরু- লালদেদ – নরসিং মেহতা- শঙ্কর দেব- মাধব দেব- হরিদাস – রামদাস-গুরু গোবিন্দ- লালন — ভারতের ইতিহাস ছুঁয়ে আছেন। এখানে ‘বাবরের প্রার্থনা’ একটি ভুল ইতিহাসের মিথ্যা তরঙ্গ। ঠিক যেমন প্রেম- জিহাদের উদ্গাতা সফট/ কৌশলী- আলাউদ্দিন আকবর! রানা প্রতাপ- শিবাজী- প্রতাপাদিত্য- চিলা রায়- বীর লাচিত বরফুকন- নর নারায়ণ- কামতেশ্বর অনেক অনেক বেশি ভারত ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক বীর। চোল, চালুক্য, গুর্জর, গৌড় এর গৌরব ভুলিয়ে মন্দির সৌধ স্থাপত্য ভাঙ্গার জঞ্জালকে ইতিহাসের উপাদান বলার শয়তানি কৌশল অস্বীকার করুন।
দেশী আর আগন্তুক, কৃষক ও আরণ্যক ভারতের ঐক্যবদ্ধ ইতিহাসের নতুন প্রহরে ‘ভাড়াটে’ ঐতিহাসিকদের পাণ্ডিত্য আর ভুয়ো ভেজাল দত্তাত্রেয় ক্যাথলিকদের খেমটা নাচ কিংবা বোরখা হিজাব ভাইজানদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাস’ আমাদের দেশের নয়।
এইসব অবান্তর উপদংশ গুটিকাগুলি দূর করতেই হবে। নতুন ইতিহাস চাই।“
প্রতিক্রিয়ায় স্বামী আদিদেবানন্দ লিখেছেন, “এই দেশের সিংহভাগ জনতা ভন্ড কাপুরুষ, মোসাহেব, সুবিধাবাদী, এবং অসচেতন, সেই সুযোগ নিয়ে ক্ষমতালোভী নেতানেত্রীরা যা খুশি তাই করে চলেছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কি প্রতিবাদ করে জনতা? এই ভেরুয়া জনতা নেতানেত্রীদের পেছনে বাঁদর নাচ নাচবে, দেশ মায়ের ভোগে যাচ্ছে, যাবে। থার্ড ওয়েভ করোনা আসছে, এই নিয়ে টিভিতে নেতারা বক্তৃতা দিচ্ছে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকার সরবরাহ নেই। আমরা বেসরকারি হাসপাতালে টিকা নিতে চাইছি, ওদের মজুত নেই। দাতব্য টিকাকেন্দ্রে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর মতো শারীরিক সামর্থ নেই।“
খগেন্দ্র চন্দ্র দাস লিখেছেন, “ইচ্ছাকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ইতিহাস বলে চালাবার এক জঘন্য, ভণ্ড প্রয়াস এদেশে চলে এসেছে দীর্ঘদিন ধরেই। এর অবসান হওয়া উচিত।“ মৃণ্ময় দাস লিখেছেন, “মিথ্যার মোহজাল ছিঁড়ে সত্যকে তুলে আনা সহজ হবে না।“
উৎসব চক্রবর্তী লিখেছেন, “অদ্ভুতভাবে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি বা দাবি অনুযায়ী ইতিহাস পেতে স্বাধীন ভারতের এতোগুলো বছর সময় লাগল। আর তথাকথিত জাতীয়তাবাদী সরকারের লাগল ৭ বছর। যাই হোক, এ এক আশার আলো।“