বর্ধমান রাজপরিবারের দেবী সর্বমঙ্গলা বাঁকুড়া শহরের কুচকুচিয়ায় পাষাণ কালী রূপে পূজিতা হচ্ছেন তিনশো বছরের অধিক কাল ধরে। সাধক শ্রীহরি আচার্য দেবীকে বাঁকুড়ায় এনে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় তিনি পঞ্চমুন্ডির আসনে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানান মন্দিরের পুরোহিত তথা শ্রীহরি আচার্যের ষষ্ঠ পুরুষ সমীর আচার্য।
তিনি জানান, শ্রীহরি আচার্য নিজ গৃহের একপাশে ঘট স্হাপন করে দেবীর আরাধনা শুরু করেন।কিছুদিন পর তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে জানতে পারেন মা বর্ধমান রাজপরিবারে সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিত হচ্ছেন। কিন্তু রাজপরিবারের পূজায় নিষ্ঠার অভাবে তিনি অসন্তুষ্ট। এভাবে চলতে থাকলে রাজপরিবারের ও রাজার একমাত্র পুত্রের ক্ষতি হতে পারে। আচার্য মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে সমস্ত ঘটনা তৎকালীন রাজা অভয়চাঁদ মহতাবকে জানান।আচার্যের মুখে স্বপ্নাদেশের কথা শুনে মহারাজ মায়ের বিগ্ৰহ আচার্যের নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করে পূজা পাঠের অনুমতি দেন। বাংলার ১১০৫ সাল নাগাদ দেবী সর্বমঙ্গলাকে বাঁকুড়ায় নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীহরি আচার্য। বাঁকুড়ায় তিনি পাষাণ কালী রূপে পূজিতা হন।
শ্রীহরি আচার্যের পর বংশানুক্রমে ভগবান আচার্য, সৃষ্টি আচার্য, চাকর আচার্য, তারাপদ আচার্য ও করালী আচার্য পূজাপাঠ করে আসেন। বর্তমানে তাদের বংশধর এই বংশের ষষ্ঠ পুরুষ সমীর আচার্য নিষ্ঠার সাথে পূজাপাঠ করে চলেছেন। এই বংশের চাকর আচার্য বড় তন্ত্র সাধক ছিলেন। তিনি তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধ লাভের জন্য নরমাংস খান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনায় সারা শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়েই অর্থাৎ ১২৬৭ সালে মন্দিরের খড়ের চালা সরিয়ে পাকা মন্দির স্হাপিত হয়। মন্দিরের সম্মুখে রয়েছে বোষ্টম পুকুর নামে এক জলাশয়। স্হানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, ভোর রাতে মা পাষাণ কালী ঐ পুকুরে স্নান করতে আসেন। সেই সময় পুকুর পাড় সংলগ্ন এলাকায় কান পাতলে নাকি নূপুরের শব্দ শোনা যায়। একবার নাকি মন্দিরে মায়ের মূর্তির কোনও হদিস মেলেনি।চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়।চাকর আচার্য স্বপ্নে জানতে পারেন মা বোষ্টম পুকুরে রয়েছেন। তিনি জলে নেমে খোঁজ পান মায়ের। এরকম বহু ঘটনা আজও লোকের মুখে শোনা যায়। পাষাণ কালী মন্দিরেই রয়েছে পঞ্চমুন্ডির আসন। সে কারণে এই মন্দির তন্ত্র সাধনার জন্য পবিত্র ও উপযোগী। বহু সাধক এজন্য এই মন্দিরে হাজির হন।
কালীপূজার দিন সারারাত ধরে চলে পূজার্চনা। ভোগরাগ ও ছাগলবলি এই মন্দিরের বিশেষত্ব। সূচনা কালের এই ঐতিহ্য আজও বজায় রয়েছে।