ছয় জেলায় বন্যা-পরিস্থিতি, সরানো হল ২.৫ লাখ মানুষকে, উদ্ধার ১০১ বছরের মহিলা

প্রবল বৃষ্টিতে এমনিতেই শোচনীয় অবস্থা ছিল। তারপর একাধিক বাঁধ-ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় আরও সংকটজনক হয়ে উঠেছে দক্ষিণবঙ্গের অবস্থা। ছ’টি জেলায় বন্যার মতো পরিস্থিতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ওইসব এলাকা থেকে প্রায় ২.৫ লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। পাঠানো হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী।

রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, সোমবার হুগলির খানাকুলে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছে। সেখানে ১০১ বছরের এক বৃদ্ধা-সহ ৩১ জনকে উদ্ধার করেছে বায়ুসেনা। যাঁরা একটি একতলা বাড়ির ছাদে দু’দিন আটকে ছিলেন। উদ্ধারের পর ওই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, জীবনে এত জল দেখেননি। গত ৪৮ ঘণ্টায় পেটেও কিছু পড়েনি। আরামবাগে হেলিকপ্টার নামার পরেই তাঁদের খেতে দেওয়া হয়। 

জলের তলায় খানাকুলের একাংশ। উদ্ধারকাজে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। (ছবি সৌজন্য পিটিআই)
জলের তলায় খানাকুলের একাংশ। উদ্ধারকাজে ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার। (ছবি সৌজন্য পিটিআই)

গত সপ্তাহে লাগাতার বৃষ্টির জেরে এমনিতেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক নদীর জলস্তর বাড়তে থাকে। তারইমধ্যে দামোদর ভ্য়ালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-সহ একাধিক ব্য়ারেজ থেকে জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ডিভিসির এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার এবং শনিবার ডিভিসি এলাকা এবং ঝাড়খণ্ডে অতি ভারী বৃষ্টির জেরে তেনুঘাট বাঁধ থেকে প্রচুর জল ছেড়েছে হেমন্ত সোরেন সরকার। তার জেরে শনিবার ১.১৪ লাখ কিউসেক জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল ডিভিসি। তারপর তা ৮০,০০০ কিউসেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

খানাকুল, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-সহ একাধিক জায়গায় বন্য়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে খানাকুল-১ ব্লকের ধান্যগোড়ি, ঠাকুরানিচকে। জলে ভেসে গিয়েছে আরামবাগ মহকুমার কমপক্ষে ৯০ টি গ্রাম। পূর্ব বর্ধমানের রায়নার একাংশ প্লাবিত হয়েছে। জলের তলায় চলে গিয়েছে খেজুরহাটি, খণ্ডঘোষের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার চাষের জমি। একই পরিস্থিতি পূর্ব মেদিনীপুরেও। কংসাবতী ব্যারেজের জল ছাড়ার ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, তমলুক, নন্দকুমার এবং ময়না ব্লকে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে উঠেছে। সেখানে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ময়না এবং পাঁশকুড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁসাই নদীর বাঁধ। শোচনীয় অবস্থা হাওড়ার উদয়নারায়পুরেরও। এমনিতে ডিভিসি জল ছাড়লে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। জলের তলায় চলে গিয়েছে প্রায় ৮০ টি গ্রাম।

ঘাটালে চলছে উদ্ধারকাজ। (ছবি সৌজন্য এএনআই)
ঘাটালে চলছে উদ্ধারকাজ। (ছবি সৌজন্য এএনআই)

তারইমধ্যে সোমবার ঘাটালের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি এলাকা পুরোপুরি জলের তলায় চলে গিয়েছে। হাজার-হাজার মানুষ আটকে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী আমায় পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলেছেন। পরিদর্শনের পর তাঁর কাছে রিপোর্ট জমা দেব।’ রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে হুগলি, হাওড়া, দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ২.৫ লাখ মানুষকে সুরক্ষিত জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে এক লাখের বেশি ত্রিপল, ১,০০০ মেট্রিক টন চাল, পানীয় জল এবং পোশাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.