দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় পাঁচ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করল মণিপুর পুলিশ। রবিবার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, সাসপেন্ড হওয়া পুলিশ কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন সেই থানার ইন চার্জ, যার থানার এলাকায় ৪ মে এই কাণ্ড ঘটেছিল। ১৯ জুলাই ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, তার পরেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে। এ বার নংপোক সেকামাই থানার ইন চার্জ-সহ পাঁচ জনকে সাসপেন্ড করা হল। বিভিন্ন সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও তারা অনড় বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে শনিবার ভোর থেকে নতুন করে উত্তপ্ত মণিপুরের বিষ্ণুপুর-চুড়াচাঁদপুর সীমানা এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে হিংসার বলি ছ’জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক বাবা এবং ছেলে। সংঘর্ষের জেরে আহত হয়েছেন ১৬ জন। গোটা এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। অভিযানে ধরা পড়েছে এক জন বিদ্রোহী। তাঁর শরীরে গুলির লেগেছে। সূত্রের খবর, ওই এলাকায় অতিরিক্ত ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। যদিও রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক গোটা বিষয়ে আঙুল তুলেছেন আধাসেনার দিকেই।
গত ৩ মে থেকে কুকি এবং মেইতেই জনজাতির সংঘর্ষের কারণে উত্তপ্ত মণিপুর। তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতির দাবি তুলেছেন মেইতেইরা। সেই নিয়েই দুই জনজাতির সংঘর্ষ। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সে কারণে পূর্ব এবং পশ্চিম ইম্ফল জেলায় এখনও জারি থাকবে কারফিউ।
শনিবার ভোর থেকে বিষ্ণুপুর-চুড়াচাঁদপুর সীমানা এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। উভয় পক্ষের গুলি ছোড়াছুড়িতে তিন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক বাবা এবং ছেলে রয়েছেন। বিষ্ণুপুর জেলার কাওয়াকটা এলাকার একটি গ্রামে এই ঘটনা হয়েছে। ৩ মে মণিপুরে হিংসা ছড়ানোর পর থেকে ওই গ্রামের বাসিন্দারা আশ্রয় শিবিরে থাকছিলেন। শুক্রবার রাতে কয়েক জন বাসিন্দা নিজেদের গ্রাম পাহারা দেওয়ার জন্য ফিরেছিলেন। শনিবার ভোর থেকে ফের শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতদের দু’জনের শরীরে ধারাল অস্ত্রের কোপ মারা হয়েছে। এর পর কাছ থেকে গুলি করে তাঁদের মারা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা হামলা শুরু হয়। মর্টার শেল এবং গ্রেনেড ছোড়ে তারা। তাতে কাওয়াকটা সংলগ্ন দু’টি গ্রাম ফুজং এবং সংদোয় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক জন। ওই গ্রাম দু’টি চুড়াচাঁদপুর জেলায় পড়ে।
একই সঙ্গে বিষ্ণুপুর জেলার তেরাখোংসাংবিতে গুলি চলেছে। তাতে মারা গিয়েছেন এক জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিন জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক পুলিশ কর্মী। পূর্ব ইম্ফল জেলার সানাসাবি এবং থামনাপোকপি গ্রামেও গুলি চলেছে। যদিও হতাহতের খবর মেলেনি। পশ্চিম ইম্ফল জেলার লাঙ্গোলে বেশ কিছু ঘর পোড়ানো হয়েছে। হিংসার প্রতিবাদে রাজধানী ইম্ফলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বহু মানুষ। শনিবারের হিংসার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে আঙুল তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক রাজকুমার ইমো সিংহ। তিনি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাই। তাঁর অভিযোগ, আধাসেনা বাহিনীর ‘কর্তব্যে গাফিলতি’ হয়েছে।