রাত সাড়ে ৮টা থেকে ব্রাজিল। রাত ১২.৩০টা থেকে আর্জেন্টিনা। এ বারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বার একই দিনে দুই লাতিন আমেরিকার প্রতিপক্ষের খেলা পড়তে চলেছে। ফলে শহরের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে শুক্রবারের দিনটা হতে চলেছে মহাভোজ। শুধু তাই নয়, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা, দু’জনেই যদি নিজেদের ম্যাচ জিততে পারে, তা হলে তো আর কথাই নেই। আগামী মঙ্গলবার ধুন্ধুমার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই দল। সে ক্ষেত্রে, ৩২ বছর পর বিশ্বকাপে মঞ্চে মুখোমুখি হবে যুযুধান দুই দল। আধুনিক প্রজন্মের যাঁরা লিয়োনেল মেসি বা নেমারকে সমর্থন করেন, তাঁরা কেউই কোনও দিন বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে খেলতে দেখেননি। সেই অপেক্ষা শেষ হতে পারে, যদি শুক্রবার রাতে নেমার এবং মেসি জ্বলে ওঠেন।
বিশ্বকাপে গ্রুপের প্রথম দু’টি ম্যাচে জিতে নকআউটের টিকিট পেয়ে যায় ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে ২-০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে সুইৎজ়ারল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে হারায় তারা। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে আসে ধাক্কা। ক্যামেরুনের কাছে ০-১ গোলে হারে ব্রাজিল। ২৮ বছর পর গ্রুপ পর্বের কোনও ম্যাচে হারতে হয় ব্রাজিলকে। শুধু তাই নয়, আফ্রিকার কোনও দেশের কাছেও প্রথম হার ছিল সেটি। গ্রুপের শীর্ষে থেকে প্রি-কোয়ার্টারে উঠলেও বুক দুরদুর করছিল অনেক সমর্থকেরই। সামনে ছিল পর্তুগালকে হারানো দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু ৫ ডিসেম্বর হলুদ-ঝড়ে উড়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথমার্ধে চার গোল দিয়ে খেলা শেষ করে দেয় ব্রাজিল। এ বার তাদের সামনে আরও কঠিন লড়াই। সামনে ক্রোয়েশিয়া। যারা ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে চাইবে।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপটা শুরু হয়েছিল খুবই খারাপ ভাবে। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হার বিশ্বকাপ ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত করে দিয়েছিল মেসিদের। সেই ধাক্কা কাটিয়ে মেক্সিকো এবং পোল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউটে ওঠে আর্জেন্টিনা। প্রি-কোয়ার্টারে লড়াই করে তারা হারায় অস্ট্রেলিয়াকে। এ বার তাদের সামনে নেদারল্যান্ডস। এ বারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন লড়াই মেসিদের কাছে। ২০১৪ সালে হারের বদলা নিতে চাইবে নেদারল্যান্ডস। সব বাধা পেরিয়ে মেসিরা সেমিফাইনালে ওঠেন কিনা, সেটাই এখন দেখার।
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে ব্রাজিল কোচ তিতে বলেছেন, “ওদের টেকনিক্যাল জ্ঞান অনেক ভাল। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য রয়েছে। ধৈর্য রাখতে পারেন এবং উচ্চ পর্যায়ে খেলার জন্য যেটা দরকার সেটা রয়েছে। তবে আমরা আগের ম্যাচে যে ভাবে খেলেছি, সেটাই বজায় রাখতে চাই। যারা ভাল খেলবে তারাই জিতবে। ফেন্ডার আলেক্স সান্দ্রো এখনও ফিট নন। বৃহস্পতিবার তিনি অনুশীলন করেছেন। তবে ম্যাচে খেলতে পারবেন কিনা নিশ্চয়তা নেই। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে যে দল নেমেছিল, সেই দলই নামতে পারে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ প্রথম একাদশে থাকবেন অ্যালিসন, এদের মিলিটাও, থিয়াগো সিলভা, মার্কুইনোস, দানিলো, কাসেমিরো, লুকাস পাকুয়েতা, রাফিনহা, রিচার্লিসন, নেমার এবং ভিনিসিয়াস। সান্দ্রো খেললে দানিলোকে বসতে হবে।
সান্দ্রো সম্পর্কে তিতে বলেছেন, “ও দুপুরে অনুশীলন করবে। তবে না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। ওর চোট একটু আলাদা। ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এখনও কিছু কাজ বাকি। ডাক্তাররা অনুমতি দিলে তবেই ও খেলতে পারবে। আমরা সব সময় ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস জোগাই যাতে ওরা ভাল খেলতে পারে। চাপের মুখেও তাই ভাল খেলার সাহস পায় ওরা। ঝুঁকি নিতেও পিছপা হয় না। এই ধরনের ফুটবলেই আমি বিশ্বাস করি।”
আর্জেন্টিনা কোচের আবার চিন্তা দলের একাধিক চোট সমস্যা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে কোচ লিয়োনেল স্কালোনি বলেছেন, “বুধবার রুদ্ধ দ্বার অনুশীলন করেছি আমরা। জানি না রদ্রিগোর চোট নিয়ে বাইরে কী কী লেখা হয়েছে। ওর একটা সমস্যা রয়েছে এটা ঠিকই। তবে বাড়াবাড়ি কিছু নয় বলেই মনে হয়েছে। ও বুধবার ভাল ভাবেই অনুশীলন করেছে। কেউ কেউ ক্লান্তির কারণে অর্ধেক অনুশীলন করেছে। অনেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়েও অনুশীলন করে না। সংবাদমাধ্যমে যা বেরোয় সেটা অনেক সময় সত্যি হয় না।”
এ দিকে, ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ভেস্তে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের। তার আগে ১৯৭৮ সালের ফাইনালেও আর্জেন্টিনার কাছে হারে তারা। ২০১৪-তেও নেদারল্যান্ডসের কোচ ছিলেন ফান হাল। তিনি বলেছেন, “২০১৪-য় হারের যে তিক্ত স্বাদ পেতে হয়েছিল আমাদের, তা শুক্রবার মিটিয়ে দিতে চাই। আমার মতে, আর্জেন্টিনা বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। কিন্তু শুক্রবার থেকেই আমাদের আসল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। আগের ম্যাচগুলোর কোনও গুরুত্ব ছিল না সেটা বলছি না। কিন্তু আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল এমন দল যাদের সঙ্গে অতীতের কোনও দলেরই তুলনা চলে না।”