কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ‘কে’ ব্লকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রিকি পন্টিং ও ঋষভ পন্থের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন বেশ কিছুক্ষণ ধরে। কিন্তু গ্যালারি থেকে ‘দাদা… দাদা…’ চিৎকার এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, পন্টিং নিজেই সৌরভ ও পন্থকে নিয়ে পিচের কাছে চলে যান। অধিনায়ক ও কোচের মুখে হাসিই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, ইডেন শুধুমাত্র কেকেআরের ঘরের মাঠ নয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডেরাও বটে।
মঞ্চ একেবারে তৈরি ছিল দিল্লির দাপটের জন্য। ঋষভ পন্থ টসেও জেতেন। কিন্তু শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েই বিপাকে ফেলেন দলকে। চলতি মরসুমে ইডেনে প্রথমে ব্যাট করা দল খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকছে না। কারণ, শুরুর কয়েকটি ওভার মন্থর থাকছে পিচ। যে ইডেনে এত বছরের খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সৌরভের, তাঁর দলের অধিনায়ক কী ভাবে টস জিতে ফিল্ডিং নেন? দিল্লি শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, টস জিতে ব্যাট নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঋষভেরই। তিনিই দলের সকলকে বলে যান, শুরুতে ব্যাট করলে সুবিধাজনক জায়গায় থাকা যাবে। ম্যাচ শেষে ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পন্থের এই সিদ্ধান্তই খাদে ফেলল দিল্লিকে। কিন্তু ইডেনের ‘মহারাজ’ মানছেন না টসের জন্যই এই হার। বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘টস বড় ফ্যাক্টর নয়। এই পিচটা আলাদা। বড় রানের পিচ নয়।’’ সৌরভ যতই ঘরের ছেলে হন, এই মাঠ নাইটদের দুর্গ। যেখানে শেষ হাসি হাসলেন বলিউডের বাদশা।
ম্যাচ শেষে বেঙ্কটেশ আয়ারকে ব্যাটিংয়ের কিছু পরামর্শ দিচ্ছিলেন সৌরভ। সেই সময় ছুটে গিয়ে পেছন থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন শাহরুখ। সৌরভ আন্দাজও করতে পারেননি কে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। পিছনে ঘুরে দেখেন বলিউডের বাদশা। সৌরভও সৌজন্যবোধে কোনও খামতি রাখলেন না। তাঁদের মধ্যে কী কথোপকথন হল? তা নিয়ে নিশ্চয়ই বিশেষ আগ্রহ তৈরি হবে ভক্তদের। ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল শাহরুখ গিয়ে সৌরভকে বলেন, ‘‘ভাগ্য তোমায় সঙ্গ দিল না দাদা। দল তো ভালই খেলছে।’’ সৌরভ বলেন, ‘‘ভাল খেলছে তো তোমার দল। শক্তিশালী দেখাচ্ছে।’’ শাহরুখ পাল্টা বলেন, ‘‘শেষ ম্যাচ আমরাও হারলাম দাদা। তবে তোমার দলও কম শক্তিশালী নয়। আশা করি, আগামী ম্যাচগুলোয় আরও ভাল খেলবে।’’ সৌরভ তা শুনে বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ম্যাচ জিততে হবে। দেখা যাক কী হয়।’’তাঁদের কথোপকথনের মাঝেই ছেলে আব্রামকে সামনে এগিয়ে দেন শাহরুখ। আলাপ করিয়ে দেন নাইটদের প্রথম অধিনায়কের সঙ্গে। ছেলেকে কী বলে সৌরভের সঙ্গে আলাপ করালেন শাহরুখ? ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল আলাপ করানোর সময় শাহরুখ বলেছেন, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। আমাদের প্রথম ক্যাপ্টেন। হ্যালো বলো।’’ বাধ্য ছেলের মতো আব্রামও হাত বাড়িয়ে দেয় সৌরভের দিকে। শাহরুখ-পুত্রকে আদর করে দর্শকদের মন জয় করেন সৌরভ। এই দৃশ্য দেখার জন্যই ম্যাচের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিলেন ১০ হাজারেরও বেশি দর্শক। এই সাক্ষাতের অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছিলেন চিত্রসাংবাদিকেরা। প্রায় সাত মিনিট দু’জনে একসঙ্গে কথা বলেন। তার পরে বেঙ্কটেশ ফের প্রশ্ন করতে শুরু করেন সৌরভকে। শাহরুখও তাঁদের মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে যান মিচেল স্টার্কের কাছে।
২০১২ সালের ৫ মে ইডেন যে বঙ্গভঙ্গের সাক্ষী ছিল, তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা গেল না সোমবার। সৌরভের সমর্থনে দিল্লির পতাকাও উড়ছিল না। মাঠ ছিল কলকাতারই।
এক সময় ঋষভ পন্থ ও অভিষেক পোড়েল জুটি গড়তে শুরু করেন দিল্লির হয়ে। কিন্তু স্কুপ করতে গিয়ে ফিরে যান পোড়েল। সি ভি বরুণের বলে বড় শট মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন পন্থ। শাহরুখও জানতেন, জেক ফ্রেজ়ার-ম্যাকগার্ক আউট হওয়ার পরে নাইটদের বিপদে ফেলতে পারেন একমাত্র পন্থ। তিনি আউট হতেই চেয়ারের উপরে উঠে পড়েন বাদশা। উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দেন বরুণের উদ্দেশে। শেষ কবে শাহরুখকে এমন বাঁধভাঙা উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছে, অনেকেই বলতে পারবেন না।
শাহরুখের এই ম্যাচ জিততে চাওয়ার আরও একটি বড় কারণ, বিপক্ষ ডাগ-আউটে সৌরভ ও পন্টিংয়ের উপস্থিতি। কেকেআরের প্রথম মরসুমে দু’জনেই ছিলেন নাইট সদস্য। তাঁদের হারানোর পরেও বাঁকা হাসির জায়গা রাখলেন না শাহরুখ। সৌরভকে আলিঙ্গনে ভরিয়ে দিয়ে ফের ইডেনের বাদশা হয়ে
ফিরলেন এসআরকে।