আনন্দবাজার ডট কম-এর লোগো ব্যবহার করে আবার ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে! এ বার বিষয়: দুর্গাপুর ‘গণধর্ষণ’

পাঠক সাবধান!

আনন্দবাজার ডট কম-এর নামে আবার ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে সমাজমাধ্যমে। এ বার ছড়ানো হচ্ছে দুর্গাপুরের ডাক্তারি ছাত্রীর ‘গণধর্ষণ’ নিয়ে, যা এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচেয়ে সংবেদনশীল ঘটনা হিসাবেই আলোচিত, এমনকি রাজনৈতিক বিতর্কেরও কেন্দ্রে।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একটি স্ক্রিনশট আমাদের কাছে আসছে (স্ক্রিনশটটি আমরা এই প্রতিবেদনের মূল ছবিতেও ব্যবহার করেছি)। আমাদের দুর্গাপুরের প্রতিনিধিও এই স্ক্রিনশট পাঠিয়ে জানিয়েছেন, সেখানে এটি বিপুল ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবং জনমানসে এটি বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

আনন্দবাজার ডট কম সমাজমাধ্যমে যে ধরনের গ্রাফিক কার্ড (টেমপ্লেট) ব্যবহার করে খবরের লিঙ্ক দেয়, প্রচারিত স্ক্রিনশটটি তারই আদলে তৈরি। আনন্দবাজার ডট কম-এর লোগো রয়েছে তাতে। এমনটি হওয়ারই সম্ভাবনা প্রবল যে— আমাদের কোনও একটি টেমপ্লেটকে ফোটোশপ জাতীয় কোনও ডিজ়াইন সফ্‌টঅয়্যারে ফেলে তার পরিবর্তন করা হয়েছে। ভাইরাল স্ক্রিনশটে যে শিরোনাম রয়েছে, তা হল:

‘দুর্গাপুরকাণ্ড: নির্যাতিতার শরীরে বীর্য বয়ফ্রেন্ডেরই। গণধর্ষণ নাকি বয়ফ্রেন্ডের জবরদস্তি? খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী আধিকারিকরা’

প্রথমেই জানিয়ে রাখা ভাল, আনন্দবাজার ডট কম এই পর্বে কখনই এমন শিরোনামের কোনও খবর করেনি। ভুয়ো খবরটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ছড়ানো হচ্ছে এবং আনন্দবাজার ডট কম-এর বিশ্বাসযোগ্যতাকে ব্যবহার করেই যে এই ভুয়ো খবর বিশ্বাসযোগ্য করতে কেউ বা কেউ কেউ মরিয়া এ সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই।

আনন্দবাজার ডট কম সমাজমাধ্যমে ‘কার্ড’ করে যে সব খবর পরিবেশন করে, তার সঙ্গে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটের সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য রয়েছে। খুঁটিয়ে সেই স্ক্রিনশট দেখলেই তা চোখে পড়ে। কিন্তু সাধারণ পাঠকের চোখে সেই পার্থক্য ধরা না-পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

ভাইরাল স্ক্রিনশটের শিরোনামের মাঝে ‘।’ যতিচিহ্নটি ব্যবহার করা হয়েছে। আনন্দবাজার ডট কম প্রায় কখনই তাদের খবরের শিরোনামে ‘।’ যতিচিহ্ন ব্যবহার করে না। এ ছাড়াও, ওই শিরোনামে ‘বয়ফ্রেন্ড’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। আনন্দবাজার ডট কম তার খবরে সাধারণত পুরুষ সঙ্গী বা প্রেমিক শব্দ ব্যবহার করে। ‘বয়ফ্রেন্ড’ একটি ইংরেজি শব্দ, আনন্দবাজার ডট কম পারতপক্ষে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনও প্রতিবেদনে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করে না। ভাইরাল স্ক্রিনশটের শিরোনামে ‘আপনি’, ‘তুমি’ সম্বোধনে ভ্রান্তি রয়েছে। ‘তদন্তকারী আধিকারিক’দের ‘আপনি’ সম্বোধন করা হয়। কিন্তু ভাইরাল স্ক্রিনশটের শিরোনামে ‘তদন্তকারী আধিকারিক’দের ‘দেখছে’ বলে লেখা হয়েছে। আনন্দবাজার ডট কম কখনই ‘তদন্তকারী আধিকারিকরা’ লেখে না, ‘আধিকারিকেরা’ লেখা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও, ‘নাকি’ লেখা হয়েছে ভুয়ো স্ক্রিনশটের শিরোনামে। আনন্দবাজার ডট কম-এর প্রতিবেদনে ‘না কি’ লেখা হয়ে থাকে।

অতীতেও আনন্দবাজার ডট কম-এর নামে এমন অনেক স্ক্রিনশট ছড়িয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আনন্দবাজার ডট কম-এর খবরের শিরোনাম বিকৃত করে ভুয়ো স্ক্রিনশট ছড়িয়ে জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন কয়েক জন। ভোটের আবহে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছিল, তা বোঝা গিয়েছিল।

শুধু ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন নয়, ২০২২ সালে আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনের সময়ে আনন্দবাজার অনলাইনের (বর্তমানে আনন্দবাজার ডট কম) নামে একটি জনমত সমীক্ষা ভাইরাল হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। সেই সমীক্ষায় তৃণমূলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্‌হাকে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। সমীক্ষার ফলাফল প্যামফ্লেটের আকারে ছাপিয়ে দৈনিক খবরের কাগজের মধ্যে ভরে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়েছিল। বাস্তবে আনন্দবাজার অনলাইন তেমন কোনও জনমত সমীক্ষা করেনি।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী (বর্তমানে সাংসদ) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে আনন্দবাজার ডট কম-এর নামে বিকৃত খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়াও, তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়েও ভুয়ো স্ক্রিনশট ছড়ানো হয়। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। লোকসভা ভোট চলাকালীনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে নিয়েও আমাদের খবরের ভুয়ো স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছিল।

সেই সব ভুয়ো স্ক্রিনশট নিয়ে আমরা প্রতিবেদন লিখে মানুষের বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করেছি অতীতেও। আমরা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, কী ভাবে ধরা যায় আনন্দবাজার ডট কম-এর নামে ছড়ানো ভুয়ো স্ক্রিনশটকে!

ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশট ভুয়ো কি না, তা বোঝার কিছু উপায় রয়েছে। আনন্দবাজার ডট কম-এর খবরের শিরোনামের স্ক্রিনশট হয়ে যা যা বিভিন্ন ইনবক্সে ঘোরে বা ফেসবুক অথবা এক্সের ফিডে ভেসে বেড়ায়, সেগুলি সত্য কি না, তা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের বাংলা শিরোনামটি গুগ্‌লে গিয়ে ‘সার্চ’ করুন। তা হলেই জানা যাবে আনন্দবাজার অনলাইন ওই খবর প্রকাশ করেছে কি না।

সাধারণত এই ধরনের ভুয়ো খবরের স্ক্রিনশটে শিরোনাম ছাড়া আর কিছু থাকে না। এ বারও ভাইরাল করা ভুয়ো খবরে ‘বিস্তারিত প্রথম কমেন্টে’ লেখা থাকলেও প্রথম কমেন্টে কোনও খবরের লিঙ্ক পাওয়া যায়নি। আনন্দবাজার ডট কম বিভিন্ন জায়গায় ওই শিরোনাম দেওয়া খবরের লিঙ্কের সন্ধান করলেও শেষ পর্যন্ত তা মেলেনি। বোঝাই যাচ্ছে, শুধু কার্ডটির শিরোনাম বিকৃত করা হয়েছে। তা ছাড়াও, আনন্দবাজার ডট কম-এর বিশেষ ‘ফন্ট’ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুয়ো স্ক্রিনশটে ভিন্ন ‘ফন্ট’ ব্যবহার করা হয় এবং হচ্ছে। তবে এই ধরনের কারিগরেরা এই সব কাজে হাত এতটাই পাকিয়ে তুলেছেন যে, আনন্দবাজার ডট কম-এর বিশেষ ‘ফন্ট’-এর খুব কাছাকাছি ‘ফন্ট’ ব্যবহার করছেন। তা-ই সাবধান হোন। লিঙ্ক ছাড়া খবরের শুধু স্ক্রিনশট দেখলেই সন্দেহ করুন। পরীক্ষা করে দেখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.