ব্যর্থ মহাতারকারা! বিশ্বকাপে বাংলার রিচা ঘোষের ৯৪ রানে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভদ্রস্থ স্কোরে ভারত

কঠিন উইকেটে কী ভাবে ব্যাট করতে হয় তা হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মন্ধানা, জেমাইমা রদ্রিগেজ়দের শিখিয়ে দিলেন রিচা ঘোষ। প্রথম ধীরে খেলে শেষ বেলায় ঝড় তুললেন বাংলার ব্যাটার। ভারতের জার্সিতে বিশ্বকাপে প্রথম অর্ধশতরান হল রিচার। শতরান পেতে পারতেন তিনি। ৯৪ রানের মাথায় ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন তিনি। রিচা ফেরার পর পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারল না ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪৯.৫ ওভারে ২৫১ রানে অল আউট হয়ে গেল তারা।

ভারতের মহাতারকারা আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। মন্ধানা করলেন ২৩ রান। যে ৩২ বল তিনি খেললেন তাতে ক’টা বল ব্যাটের মাঝে খেলেছেন তা দেখার বিষয়। হরমনপ্রীতের হাল আরও খারাপ। ৯ রানে আউট হলেন তিনি। যে জেমাইমাকে ভবিষ্যতের তারকা ধরা হয় তিনিও শূন্য রানে আউট হলেন।

এ বারের বিশ্বকাপে আরও একটি ম্যাচে আট নম্বরে নামলেন রিচা। বলা ভাল, নামানো হল তাঁকে। রিচার নাকি ফর্ম ভাল নেই। তাই উপরে নামানো হচ্ছে না তাঁকে। সেই কারণে কি এই ম্যাচকে বদলার মঞ্চ বানিয়ে ফেললেন বাংলার কন্যা? আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষবেলায় ঝড় তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু এই ম্যাচে পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। রিচা যখন ব্যাট করতে নামেন তখন ভারতের স্কোর ৬ উইকেটে ১০২ রান। তখনও বাকি ২৪ ওভার। অর্থাৎ, প্রায় অর্ধেক ম্যাচ।

প্রথমে আমনজ্যোৎ কৌর ও তার পর স্নেহ রানার সঙ্গে জুটি বাঁধলেন রিচা। আমনজ্যোতের ব্যাটে-বলে ঠিক মতো হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে রানের পুরো দায়িত্ব রিচাকে নিতে হচ্ছিল। দৌড়ে রানের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যে বাজে বল পেলে বড় শট খেলছিলেন। ৫৩ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি।

অর্ধশতরানের পর গিয়ার বদলালেন রিচা। প্রথম থেকে একেবারে পঞ্চম গিয়ার। পরের ২৪ বলে এল ৪৪ রান। শেষ ১০ ওভারে ভারত করল ৯৮ রান। তার বেশির ভাগটাই রিচার ব্যাটে। যে বোলিং আক্রমণের সামনে মন্ধানা, হরমনপ্রীত, জেমাইমারা খাবি খাচ্ছিলেন, সেই আক্রমণকে নিয়ে ছেলেখেলা করলেন রিচা। এক বার হাত খোলার পর আর থামেননি তিনি। তবে তার মধ্যে সুযোগও দেন রিচা। দু’বার তাঁর ক্যাচ পড়ে। এক বার রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া হয়। কিন্তু তার পরেও রিচার ১১ চার ও চার ছক্কার এই ইনিংস বহু দিন মনে থেকে যাবে। কারণ, খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন তিনি। রিচাকে সঙ্গ দিলেন স্নেহ। ন’নম্বরে নেমে ২৪ বলে ৩৩ রান করলেন তিনি।

শেষ ওভারে শতরানের সুযোগও ছিল রিচার কাছে। ৯৪ রানের মাথায় কোমরের উচ্চতার ফুলটসে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন রিচা। তিনি নো-বলের আবেদন করেন। রিপ্লে-তে দেখা যায় ৪ সেন্টিমিটারের জন্য নো-বল হয়নি। ৭৭ বলে ৯৪ করলেন রিচা। তিনি আউট হওয়ার পরের বলেই শেষ হয়ে গেল ভারতের ইনিংস।

শতরান না করলেও এই ম্যাচে বেশ কয়েকটি নজির গড়েছেন বাংলার রিচা। মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে আট বা তার নীচে ব্যাট করতে নেমে এটি কোনও ক্রিকেটারের করা সর্বাধিক রান। ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এই ম্যাচে ১৪৯ রান করেছে ভারত। বিশ্বকাপে ৬ উইকেট পড়ার পর এটি কোনও দলের করা সর্বাধিক রান। আর এই সব নজিরের নেপথ্যে রয়েছেন বাংলার উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রান না পাওয়ায় নীচে নামানো হচ্ছিল তাঁকে। এই দলে তিনি কতটা জরুরি, তা বুঝিয়ে দিলেন রিচা। ভারতের মুখরক্ষা করলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.