বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই) সমীক্ষা চালানোর আগেই সেখানে ‘হিন্দুত্বের প্রমাণ’ নষ্ট করা হতে পারে অভিযোগ তুলল হিন্দুপক্ষ। ২০২১ সালে জ্ঞানবাপীতে পূজার্চনার অধিকারের দাবিতে আবেদনকারী পাঁচ মহিলার অন্যতম রাখি সিংহ বুধবার বারাণসী জেলা আদালতে মসজিদ চত্বরের ‘পুরাতাত্ত্বিক তথ্যপ্রমাণের’ সুরক্ষার দাবিতে আবেদন জানিয়েছেন।
জ্ঞানবাপী চত্বরে এএসআই-এর সমীক্ষার কাজ চালানোর উপর স্থগিতাদেশের সময়সীমা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (৩ অগস্ট) পর্যন্ত বাড়িয়েছে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। শুক্রবার (৪ অগস্ট) ওই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। কিন্তু রাখির আইনজীবী মনবাহাদুর সিংহ এবং অনুপম দ্বিবেদী বুধবার বারাণসী আদালতকে জানান, মা শৃঙ্গার গৌরীস্থল, পশ্চিমের দেওয়াল-সহ বিভিন্ন এলাকার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি তার আগেই ‘মুছে ফেলা’ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’-র আইনজীবী এসএম ইয়াসিন সেই অভিযোগ খারিজ করে বলেন, ‘‘এমন আশঙ্কা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। মসজিদ চত্বরে ইতিমধ্যেই সরকারি নিরাপত্তা রয়েছে।’’
মসজিদ কমিটির আবেদন মেনে গত ২৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট জ্ঞানবাপী চত্বরে এএসআই সমীক্ষার বিষয়ে বারাণসী জেলা আদালদের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছি। বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত জ্ঞানবাপী চত্বরে সমস্ত সমীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ওই সময়সীমার মধ্যে বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইলাবাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে বলেছিল মসজিদ কমিটিকে। এর পর ইলাহাবাদ হাই কোর্ট স্থগিতাদেশের সময়সীমা বৃদ্ধি করে। সমীক্ষার কাজ চালাতে দিলে প্রাচীন ওই সৌধের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মসজিদ কমিটির তরফে ইতিমধ্যেই হাই কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে।
যদিও এএসআই বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’-এর সাহায্যে খননের কাজ ছাড়াই সমীক্ষার কাজ চালানো যেতে পারে। তাতে ওই প্রাচীন কাঠামোর কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই বারাণসী জেলা আদালতের বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেস জ্ঞানবাপী চত্বরে ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন এএসআই-কে। তবে বিতর্কিত ওজুখানায় পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’ এবং সন্নিহিত ‘সিল’ করা এলাকায় এখনই কোনও সমীক্ষা হবে না বলে বারাণসী জেলা আদাোলত জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন:
‘সাংবিধানিক নয় ৩৭০ ধারা বাতিল, রাজনৈতিক পদক্ষেপ’, সুপ্রিম কোর্টকে বললেন কপিল সিব্বল
‘মসজিদ বললে সংঘাত বাধবেই’! বিচারাধীন জ্ঞানবাপী নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী যোগীর
জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির তরফে পাঁচ হিন্দু মহিলার ২০২১ সালের পূজার্চনার আবেদন খারিজ করার জন্য বারাণসী জেলা আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। মসজিদ কমিটির আইনজীবী অভয় নাথ বারাণসী জেলা আদালতে জানিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন এবং ১৯৯৫ সালের সেন্ট্রাল ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি হতে পারে না। অন্য দিকে, হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু জৈন এবং হরিশঙ্কর জৈনের দাবি ছিল, ১৯৯১ সালের ওই আইন জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি জানান, ১৯৪৭ সালের পরেও শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পূজার্চনার প্রমাণ রয়েছে। বারাণসী জেলা আদালত হিন্দু পক্ষের দাবি মেনে জ্ঞানবাপীর ‘সিল’ করা এলাকার বাইরে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল।