গরম যথেষ্ট, তাও বর্ষার ভ্রমণের তালিকায় কেন রাখতে পারেন কেরল?

পাহাড়ের কোলে সমুদ্রসৈকত, চোখজুড়ানো নারকেলের বাগান, ঢেউখেলানো চা-বাগান, শহর বেষ্টন করে থাকা হ্রদ, জলপ্রপাত, অরণ্য, বন্যপ্রাণ, ইতিহাস, মন্দির— যে সমস্ত টানে পর্যটকেরা বেড়িয়ে পড়েন, তার সবটাই রয়েছে এখানে। দক্ষিণ ভারতের কেরল, পর্যটনের জন্যই যার বিশেষ পরিচিতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি— যা দেখে লোকে একে ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ও বলেন। সেখানেই ঘুরে আসতে পারেন এই বর্ষায়।

হিসেব অনুযায়ী জুনের শুরুতেই বর্ষা প্রবেশ করার কথা কেরালায়। তবে সেই নিয়মে বা দিনক্ষণে কিছু বদলও হয়। বর্ষা আসে প্রকৃতির মর্জিতে। অনেকেই মনে করেন, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি বা বড়জোর মার্চ পর্যন্তই কেরল ভ্রমণের জন্য আদর্শ। কারণ, উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুর এই রাজ্যে এই সময় তাপমাত্রা একটু সহনীয় থাকে। তা সত্ত্বেও অনেকের কাছে কেরল ভ্রমণ বর্ষাতেই উপভোগ্য।

কেন কেরল যাবেন বর্ষায়?

কেরলের এক এক জেলার দ্রষ্টব্য, রূপ এক এক রকম। কোথাও রয়েছে জলপ্রপাত, আবার কোথাও একাধিক জেলা জুড়ে ব্যাক ওয়াটারের বিস্তৃতি। আবার এ রাজ্যেই রয়েছে শৈলশহর, অরণ্য।

বর্ষার শ্যামলিমা: বর্ষার জলে ধৌত হয়ে নবরূপে ধরা দেয় প্রকৃতি। নারকেল গাছের সারি, চাষের খেত, চা-বাগান সবই যেন মনে হয় আরও উজ্জ্বল। এই শ্যামল সৌন্দর্য উপভোগ করতেই বর্ষায় যাওয়া চলে কেরলে। এই সময় আর্দ্রতা, উষ্ণতা দুই-ই বেশি থাকলেও, প্রকৃতির এমন রূপ ধরা দেয় ঘনঘোর বর্ষাতেই।

পশ্চিমঘাটের রূপ: ঢেউখেলানো অনুচ্চ পাহাড়। সেই রং, কোথাও গাঢ়, কোথাও হালকা। তারই আনাচকানাচে মেঘের আনাগোনা। মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে রবিকরণ। বর্ষা ঋতুতে এমন ভাবেই সাজে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, সাজে শৈলশহর মুন্নার। পথের পাশে চায়ের বাগান যেন সবুজের গালিচা পাতা। কোথাও আবার পথের পাশে জলপ্রপাতের উঁকিঝুঁকি, মেঘ-রোদ্দুরের খেলা। পশ্চিমঘাটের রূপ বর্ষায় অনন্য।

মুন্নারও বর্ষায় ভীষণ সুন্দর হয়ে ওঠে।

জলপ্রপাতের সৌন্দর্য: ‘গুরু’ ছবিতে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের নাচের দৃশ্যের কিছুটা শুটিং হয়েছিল আথিরাপল্লি জলপ্রপাতে। বহু হিন্দি ছবিতেই এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অসধারণ ভাবে ধরা রয়েছে। তবে আথিরাপল্লি জলপ্রপাতের প্রকৃত রূপ উপভোগ বর্ষা ছাড়া অন্য কোনও ঋতুতেই সম্ভব নয়। এ রাজ্যের প্রায় সব জলপ্রপাতই বর্ষার জলে পুষ্ট। বৃষ্টি হলেই তাদের রূপ পূর্ণতা পায়।

আথিরাপল্লি জলপ্রপাত।

পাহাড় এবং সৈকত: কেরলের বহু সৈকতেই সমুদ্র এসে মিশেছে পাহাড়ের গায়ে। সেই শোভা দেখতেই বছরভর দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা ভিড় জমান। কোভালম, ভারকালা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সর্বজনবিদিত। এই সৈকতগুলিতে সূর্যাস্তের রূপ দর্শনের সাক্ষী হতেই আসেন সকলে। তবে রিমঝিম বৃষ্টি, সবুজ অনুচ্চ পাহাড়, মেঘলা আকাশে উত্তাল সাগরের সৌন্দর্য উপভোগের আদর্শ সময় কিন্তু বর্ষাই।

ব্যাক ওয়াটার: কেরলের পর্যটক মহলে পরিচিতির অন্যতম কারণ ব্যাক ওয়াটার। ভেম্বানাদ হ্রদ, পুন্নামাডা হ্রদ ও আরব সাগরে ঘেরা আলাপ্পুঝার বুক চিরে অসংখ্য খাঁড়ির জাল তৈরি হয়েছে। সেই জলপথের ধারে ধারে দ্বীপের মতোই জনপদ। চাষবাস হয় সেখানে। বাসস্থান গ্রামবাসীদের। আকাশে কৃষ্ণবর্ণ মেঘ জমলে ব্যাক ওয়াটার বলে পরিচিত এই জলপথের রূপ হয় ভিন্ন। বর্ষার জলে কখনও ডুবে যায় দ্বীপের মতো কৃষিজমি। বছরের অন্য মরসুমের চেয়ে সেই রূপ একেবারেই ভিন্ন।

বর্ষায় ব্যাক ওয়াটার।

সতর্কতা: প্রকৃতির রূপ এক এক ঋতুতে এক এক রকম। তবে বর্ষা যদি প্রবল আকার ধারণ করে, তা পর্যটকদের জন্য সুখকর হবে না। বন্যা পরিস্থিতিও হতে পারে এমন মরসুমে। তাই বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে, সেখানকার আবহাওয়া, বর্তমান পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাস সম্পর্কে স্পষ্ট করে জেনে যাওয়া দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.