জল শুকিয়ে দেখা যাচ্ছে চর, রবীন্দ্র সরোবর নিয়ে চিন্তায় পরিবেশকর্মীরা 

দক্ষিণ কলকাতার ‘ফুসফুস’ রবীন্দ্র সরোবর বিপন্ন। সরোবরের জলস্তর যে ভাবে হু হু করে নামছে, তাতে আশঙ্কিত পরিবেশবিদেরা। বর্তমানে সরোবরের একাংশে চর পড়ে ঘাস জন্মেছে। চারপাশের অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। এ বার গরমে যেমন ভাবে জলস্তর নামছে, তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন রবীন্দ্র সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা। সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘যে ভাবে রবীন্দ্র সরোবরের জলস্তর নামছে, তাতে আমরা চিন্তিত। গত এক বছর ধরে তেমন বৃষ্টি না হওয়াতেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সরোবরের সমস্যার সমাধানে শীঘ্রই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’

পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবরের জলস্তর কেন নামছে, সেই বিষয়ে ‘রাজ্য জল তদন্ত অধিদফতর’ (স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট)-কে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

গত কয়েক মাস ধরেই রবীন্দ্র সরোবরের একাংশে চর পড়ার বিষয়টি প্রাতর্ভ্রমণকারীদের নজরে এসেছে। ১৯০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই সরোবর। তার মধ্যে ৯০ একর জায়গা জলাশয়ের অধীনে। সরোবরের এক নম্বর গেট লাগোয়া এলাকায় জলাশয়ের ঘাটে বহু আগে স্থানীয় গোবিন্দপুর বস্তির বাসিন্দারা স্নান করতেন। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জলস্তর কমে যাওয়ায় ঘাটের কাঠামো পুরোটাই বেরিয়ে এসেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা পরিবেশকর্মী সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে এই এলাকায় বাস করছি। এই ঘাটের সিঁড়িরআশপাশের অংশ অতীতে কখনও শুকোয়নি। কিন্তু এখন যে ভাবে জল শুকিয়ে সিঁড়ির কাঠামো বেরিয়ে এসেছে, তা পরিবেশগত ভাবেঅত্যন্ত বিপজ্জনক। দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্র সরোবরের জল এই ভাবে শুকিয়ে গেলে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।প্রশাসনের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, সরোবর বাঁচাতে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’

সরোবরের জলস্তর এ ভাবে নামছে কেন?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধিকর্তা পঙ্কজকুমার রায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘গোলপার্ক থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর। এখানকার

জলস্তর নামার একাধিক কারণ থাকতে পারে। সরোবরের চারপাশে বহুতলনির্মাণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সেই সমস্ত বহুতল আবাসনে যে হারে ভূগর্ভের জলের অপচয় হয়, তাতে জলস্তর নামতে বাধ্য। তারপ্রভাবও রবীন্দ্র সরোবরে পড়তে পারে। সেটার আশঙ্কা প্রবল। তবে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমি কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।’’

ভূবিজ্ঞানী সুজীব কর বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবর এলাকারআশপাশে প্রচুর বহুতল নির্মাণ হওয়ায় গভীর নলকূপের দ্বারা মাটি থেকেবিপুল পরিমাণে জল তুলে নেওয়া হচ্ছে। যার ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর হু হু করে নামছে। এই সরোবরের সঙ্গে আদিগঙ্গার সংযোগ রয়েছে। মাটির নীচ দিয়ে ১৮ থেকে ৪৬ মিটার গভীরতায় অবস্থিত জলবাহীশিলাস্তরগুলি সরোবরের সঙ্গে আদিগঙ্গার সম্পর্ককে ধরে রেখেছে।তাই আদিগঙ্গায় জল কমে গেলে সরোবর থেকে জল টেনে নিচ্ছে। ফলে সরোবরে জল থাকছে না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.