চতুর্থ দিনের শেষেই দেওয়াল লিখন প্রায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হলও সেটা। পুরুষদের পর এ বার মহিলাদের অ্যাশেজ টেস্টও জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে চমক দিলেন অ্যাশলি গার্ডনার। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট নিলেন তিনি। গার্ডনারের ঘূর্ণির জবাব ছিল না ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের কাছে। ফলে পঞ্চম দিন প্রথম সেশনেই শেষ হয়ে গেল খেলা। ৮৯ রানে জিতে গেলেন অ্যালিসা হিলিরা।
মহিলাদের অ্যাশেজে একমাত্র টেস্ট জিততে পঞ্চম দিন অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৫ উইকেট। অন্য দিকে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৫২ রান। ড্যানিয়েল ওয়েট ছাড়া ইংল্যান্ডের সে রকম কোনও ব্যাটার বাকি ছিল না। সেই হিসাবে সুযোগ বেশি ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেটাই করে দেখাল তারা। ইংল্যান্ডের ৫ উইকেট ফেলতে শেষ দিনের প্রথম সেশনে মাত্র ২১ ওভার লাগল অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের। বলা ভাল গার্ডনারের। কারণ, শেষ ৫টি উইকেটই নিলেন তিনি।
পঞ্চম দিনের শুরু থেকেই গার্ডনারকে আক্রমণে আনেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিলি। গার্ডনার নিরাশ করেননি অধিনায়ককে। শুরুতেই কেট ক্রসকে আউট করেন তিনি। তার পরে সাজঘরে ফেরেন অ্যামি জোনস। দু’টি ক্ষেত্রেই হিলির অবদান রয়েছে। ক্রসের ক্যাচ ধরেন হিলি। জোনস তাঁর হাতে স্টাম্প আউট হন।
ওয়েটের সঙ্গে কিছুটা জুটি বাঁধেন সোফি ইকলেস্টোন। অর্ধশতরান করেন ওয়েট। কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বেশি ক্ষণ নয়। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করে ইকলেস্টোনকে এলবিডব্লিউ করেন গার্ডনার। বাকি দুই উইকেট পড়তে বেশি ক্ষণ সময় লাগেনি। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে ওয়েটকে ৫৪ রানের মাথায় এলবিডব্লিউ করে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করে দেন গার্ডনার।
এই টেস্টে বল হাতে সেরা গার্ডনার। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটের পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অর্থাৎ, টেস্টে ইংল্যান্ডের ২০টি উইকেটের মধ্যে ১২টিই তাঁর দখলে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় জলে গেল প্রথম ইনিংসে ট্যামি বিউমন্টের দ্বিশতরান। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভরসা দিচ্ছিলেন বিউমন্ট। কিন্তু তিনি আউট হতেই চতুর্থ দিনের শেষ দিকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। ফলে হেরেই মাঠ ছাড়তে হল তাদের।
অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড যে ট্রফির জন্য লড়ছে তার নাম অ্যাশেজ হল কী ভাবে? আসলে অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।