আজ মেদিনীপুরে সহস্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক তুমুল বিক্ষোভ দেখালেন রিজিওনাল ম্যানেজারের দপ্তরে। মেদিনীপুর স্টেশন থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শহর পরিক্রমা করে শহরের প্রাণকেন্দ্র জেলাশাসক দপ্তরের বিক্ষোভ হয়। ক্ষুদিরাম মোড়ে অবরোধ হয় প্রায় ৪০ মিনিট। পোড়ানো হয় বিদ্যুৎ দপ্তর ও সরকারের জারি করা ট্যারিফ অর্ডার ২০২৩। ফিক্সড চার্জ, মিনিমাম চার্জ, ভিসি-আরসি চার্জ ও সরকারি ডিউটি বসিয়ে বিপুল বর্ধিত বিল পাঠানো হচ্ছে এবং স্মার্টলি টাকা লুটের যন্ত্র স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তার প্রতিলিপি পোড়ানো হয়। অগ্নিসংযোগ করেন ABECA- এর রাজ্য সহ-সভাপতি মধুসূদন মান্না। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে গ্রাহকদের বাদানুবাদ হয়। এরপর বিক্ষোভ মিছিল রিজিওনাল ম্যানেজারের দপ্তরের অভিমুখে রওনা দেয়।
রিজিওনাল ম্যানেজারের গেটে বিশাল পুলিশ বাহিনী আগে থেকেই মোতায়েন ছিল, তাদের সঙ্গে গ্রাহকদের তীব্র ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা গোটা এলাকা অবরুদ্ধ করে ফেলেন। চলে বিক্ষোভ। এরপর মধুসূদন মান্নার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল রিজিওনাল ম্যানেজারের কাছে এবং অ্যাবেকার জেলা আহ্বায়ক চন্ডী হাজরার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল জোনাল ম্যানেজারের কাছে ডেপুটেশন দেন। যে দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ লাইন কাটা শুরু হয়েছে এই দুই আধিকারিক কোনো উত্তর দিতে পারবেন না বলে আগে থেকে জানানো সত্ত্বেও তারা অফিস ছেড়ে কার্যত চলে যান। এই খবর শোনা মাত্রই গ্রাহকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। চলে রাস্তা অবরোধ। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে আরএম দপ্তর এবং তার সামনের রাস্তা অবরুদ্ধ থাকে। আরএম দপ্তর এবং ক্ষুদিরাম মোড়ের বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন মধুবাবু, চন্ডীবাবু ছাড়াও রাজ্য কমিটির সদস্য দীপক পাত্র, অশোক ঘোষ, এছাড়া দিলীপ দাস, সুশান্ত সাহু, অসিত সরকার, রঞ্জিত বাঁকুড়া, ভবানী চক্রবর্তী প্রমুখ।
চন্ডীবাবু জানান, সরকারি নির্দেশে বিদ্যুৎ দপ্তরের পক্ষ থেকে বেপরোয়া বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হচ্ছে। সর্বস্তরের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা কার্যত দিশাহীন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র শিল্পে মিনিমাম চার্জ প্রতি কেভিএ ২০০ টাকা করে (যা আগে ছিল না) নেওয়ার ফলে এক ইউনিটও বিদ্যুৎ না খরচ করে ৪ হাজার ৫ হাজার টাকার বিল আসছে। একই অবস্থা কৃষিতেও। পরিণতিতে ক্ষুদ্র শিল্প, কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। যে গ্রাহকরা টাকা দিতে পারছেন না, দপ্তর কর্তৃপক্ষ অতি তৎপরতার সঙ্গে লাইন কেটে দিচ্ছেন। কার্যত ডাকাতি শুরু হয়েছে।
অপরদিকে স্মার্টলি টাকা লুটের যন্ত্র স্মার্ট প্রিপেড মিটার বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এসবের প্রতিরোধে আজকের এই বিক্ষোভ। তিনি গ্রাহকদের আহ্বান জানান, “এলাকায় এলাকায় ট্রান্সফর্মার ভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে এই লুঠতরাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। অযৌক্তিক টাকা আদায় এবং না দিতে পারলে লাইন কাটতে এলে দপ্তর কর্তৃপক্ষকে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন চন্ডীবাবু।”
তিনি জানান, সরকার ও বিদ্যুৎ দপ্তরের এই সিদ্ধান্তের বলি ক্ষুদ্র শিল্প। হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্প ও কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। এমতাবস্থায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় শিল্প, মেলা এসব করে বৃহৎ শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পের জয়গান গাইছেন। যা ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতি নিষ্ঠুর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এর তীব্র ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে দাবি করি, পূর্বের মতোই মিনিমাম চার্জ ধার্য করে বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হোক। অন্যথায় বাস্তবে পশ্চিমবাংলার ক্ষুদ্র শিল্প নিঃশেষ হয়ে যাবে।”
তিনি সর্বস্তরের গ্রাহকদের আহ্বান জানান, স্মার্টলি টাকা লুটের যন্ত্র স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বসাতে দেবেন না। সেই সঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বাক্ষর পত্রে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান।