স্বাধীনতা দিবসে বিজেপির সব নেতা-কর্মীর বাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলতে হবে। প্রচার করতে হবে, সাধারণ মানুষও ওই দিন যেন বাড়িতে জাতীয় পতাকা তোলেন। সেই সঙ্গে আগের দিন অর্থাৎ ১৪ অগস্ট জেলায় জেলায় ‘বিভাজন বিভীষিকা’ দিবস পালন চায় রাজ্য বিজেপি। ইতিমধ্যেই সব জেলাকে এই মর্মে নির্দেশ পাঠিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের রাজ্য নেতৃত্ব। তাতে বলা হয়েছে, ওই দিন সম্ভব না হলেও ১৩ থেকে ১৫ অগস্টের মধ্যে এই কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে।
রাজ্য বিজেপির তরফে সব জেলা নেতৃত্বকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘আমরা যেমন স্বাধীনতার অমৃতকাল পালন করছি, একই সঙ্গে দেশভাগের বিবর্ণ স্মৃতিও আমাদের মাঝে ঘুরে ফিরে আসছে। ৭৫ বছরে দেশভাগের সেই বেদনা এবং শরণার্থীদের দুর্ভোগের যন্ত্রণা স্মরণ করার জন্য বিভাজন-বিভীষিকা দিবস পালন করতে হবে। প্রতিটি জেলায় এক বা একাধিক আলোচনা সভা করতে হবে।’’ সব জেলায় যাতে এই কর্মসূচি সফল হয় তার জন্য বিজেপির তরফে রাজ্য বিজেপির সহ-সভানেত্রী মধুছন্দা করকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গেরুয়া শিবির তথা সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই দেশভাগের জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করে থাকে। বৃহস্পতিবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসকে আক্রমণও করেছেন। সেই সময়ে ‘বিভাজন বিভীষিকা’ শব্দবন্ধ উচ্চারণও করেন। ২০২১ সালে প্রথম বার তিনি ‘বিভাজন বিভীষিকা দিবস’ পালনের কথা বলেছিলেন। ২০২১ সালের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে লালকেল্লা থেকে মোদী দেশবাসীকে দেশভাগ স্মরণ করাতে এমন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করেন। তার আগের দিন টুইটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘দেশ ভাগের যে যন্ত্রণা, সেই স্মৃতি কখনও ভোলা যায় না। হিংসার কবলে পড়ে আমাদের বহু ভাইবোন ঘরছাড়া হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের সেই সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগকে স্মরণ করেই ১৪ অগস্টকে ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ দাবি করেছিলেন, “এই বিভাজন বিভীষিকা দিবসই আমাদের মনে করিয়ে দেবে, সামাজিক বিভাজন এবং অনৈক্যের বিষ ছুড়ে ফেলা উচিত।”
১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট দেশভাগ হয়েছিল। আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তানের। ১৪ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে পাকিস্তান। আর সেই দেশভাগের দিনকেই ‘বিভাজন বিভীষিকা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন মোদী। এর পরের বছরে সরকারি উদ্যোগ শুরু হয়। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনের অঙ্গ হিসাবে দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশভাগের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের ছিন্নমূল হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়। একটি প্রদর্শনী তৈরি করে দেয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ এবং ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস। বাংলার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই নির্দেশ এলে প্রতিবাদ করেছিল রাজ্য সরকার। এমন উদ্যোগের নিন্দা করেছিল তৃণমূলও।
চলতি বছরে তেমন কোনও সরকারি উদ্যোগ না থাকলেও বিজেপি রাজ্য জুড়ে দেশভাগের কথা মনে করাতে চায়। কোন কোন বিষয়ে জোর দিয়ে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করতে হবে সে নির্দেশও রাজ্যের তরফে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, তারই অঙ্গ হিসাবে দেশভাগের স্মৃতি উস্কে দেওয়ার এই উদ্যোগ। বাংলায় একটা বড় সময় পর্যন্ত উদ্বাস্তু ভোটের সিংহ ভাগ যেত বামেদের ঝুলিতে। পরে সেই ভোটের দখলও নিয়ে নেয় তৃণমূল। নতুন প্রজন্মের ভোটাররা অনেকেই সেই সময়ের কাহিনি জানে না। বিজেপি প্রবীণদের স্মৃতি উস্কে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবীনদের জানাতে চায় দেশভাগের ঘটনা। এ প্রসঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা শুধু ভোটের জন্য রাজনীতি করি না। ইতিহাস স্মরণ করা উচিত সব সমাজেরই। আর ভারতের ইতিহাসের সব চেয়ে অভিশপ্ত ঘটনা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের জানা উচিত। সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েই সমাজ-সভ্যতার অগ্রগতি ঘটবে। না হলে সেই অন্ধকারতম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বিষয়টির মধ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে ব্রিটিশের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, যারা ব্রিটিশের কাছে আত্মসমর্পণকারী সাভারকারের পুজো করে, ভোটের জন্য পুলওয়ামায় ৪০ জন জওয়ানকে মেরে দেয় তাদের মুখে দেশভাগ, দেশপ্রেম এ সব কথা মানায় না।’’