সন্দেশখালিকাণ্ডের পর এ বার কলকাতায় এলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) ডিরেক্টর রাহুল নবীন। ইডির একটি সূত্রে খবর, সোমবার মধ্যরাতে কলকাতা পৌঁছন রাহুল। মঙ্গলবার সকালে ইডির পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন তিনি। সেখানে ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের খোঁজে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
গত শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয় পাঁচ ইডি আধিকারিকের একটি দল। সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়িতে ইডি আধিকারিকেরা পৌঁছনোর আগেই ঘিরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তার মধ্যে তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁকে ডাকাডাকি করেন ইডি আধিকারিকরা। ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না মেলায় দরজা ভাঙার চেষ্টা হয়। ঠিক সেই সময়েই তাঁদের ঘিরে ফেলে মারধর শুরু হয় বলে অভিযোগ। সরিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও। এর পর ইডি আধিকারিকদের ধাওয়া করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন শাহজাহানের অনুগামীরা। ভাঙচুর চলে গাড়িতে। সেই সময়েই তিন ইডি আধিকারিক জখম হন। তাঁদের সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা হয়। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। একই ভাবে পরে বনগাঁতেও ইডির উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। সেখানে বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতে একই মামলায় তল্লাশি চালাচ্ছিল ইডি। দু’টি ঘটনাতেই ইডি রাজ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে বনগাঁর ঘটনায় ইডির দাবি, পুলিশ সুপারকে আগে থেকে জানানো সত্ত্বেও তিনি বাহিনী পাঠাননি। পাঠালে বনগাঁয় প্রাক্তন পুর প্রধান শঙ্করকে নিয়ে বেরনোর সময় ইডির উপর হামলার ঘটনা আটকানো যেত। সন্দেশখালিতে অবশ্য তেমন সুযোগ ছিল না। তবে ইডি বলেছিল, এফআইআর করা সত্ত্বেও সন্দেশখালির ঘটনায় এফআইআরের কপি দেয়নি পুলিশ।
অন্য দিকে, শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের কোনও খোঁজ মেলেনি। ইডি আধিকারিকদের একাংশের মতে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পারেন ওই তৃণমূল নেতা। এ জন্য তাঁর খোঁজে আইবি এবং বিএসএফের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলেও ইডির একটি সূত্রে খবর। ইডির অন্য একটি সূত্র অবশ্য বলছে, সন্দেশখালিতেই কোথাও লুকিয়ে আছেন শাহজাহান। এর মধ্যে শাহজাহানের কণ্ঠে একটি অডিয়ো বার্তা ভাইরাল হয়েছে (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। তাতে বক্তাকে বলতে শোনা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে ইডি বা সিবিআইকে নিয়ে যেন তাঁর অনুগামী এবং দলের নেতাকর্মীরা ভয় না পান।
অন্য দিকে, সন্দেশখালিকাণ্ডে এই প্রথমবার মুখ খুলেছেন রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি রাজীব কুমার। সোমবার তিনি বলেছেন, যাঁরা যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠিনতম পদক্ষেপ করা হবে। আর যাঁরা আইন ভেঙেছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও। এর মধ্যে ইডি ডিরেক্টরের কলকাতায় আসা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৯৩ ব্যাচের আইআরএস নবীন ইডি-র বিশেষ অধিকর্তা পদে রয়েছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। তার আগে তিনি নবীন ইডি-র সদর দফতরে প্রধান ভিজিল্যান্স অফিসার ছিলেন।