অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও মেলে নি।তাই বাধ্য হয়ে অসুস্থ স্ত্রীকে টোটো করে স্টেশনে নিয়ে যায় স্বামী। আর সেখানেই মৃত্যু হয় অসুস্থ স্ত্রীর। চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে বর্ধমানের ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী। প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেলেনি অ্যাম্বুলেন্স। গরিব জনমজুর পরিবারের গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য হয়নি। তাই ভাতার হাসপাতাল থেকে টোটোয় চাপিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ট্রেন ধরার জন্য যান স্বামী।
তবে শেষরক্ষা হল না। ভাতার রেলস্টেশনে পৌঁছানো মাত্রই মৃত্যু হয় মহিলার। বৃহস্পতিবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। স্ত্রীর দেহ আগলে রেলস্টেশনের গাছের তলায় বসে বসে কাঁদছিলন স্বামী। তারপর স্থানীয় কয়েকজন মিলে চাঁদা তুলে গাড়ি ভাড়া করে দেহটি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ভাতার হাসপাতালে পৌঁছানোর পরেও ওই রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স না জোটায় প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়রা। মৃত মহিলার নাম মেনকা কোঁড়া (৫০)। বর্ধমানের পারবীরহাটা এলাকায় তাদের বাড়ি। মৃতার স্বামী অসিত কোঁরা জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই জনমজুরি করেন। গত সোমবার স্বামী-স্ত্রী ও আরও কয়েকজন মিলে ভাতারের কাঁচগড়িয়া গ্রামে এক কৃষকের কাছে বোরোধান কাটার কাজে যান।
অসিত কোঁড়া বলেন,” আমার স্ত্রী দুদিন ধরেই রোদেগরমের কারণে অসুস্থ ছিল।’ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক কৈলাস রায় জানান,গাড়ি খারাপ আছে, ঠিকই। তবে একেবারে চলাচল করে না তা নয়। আমাকে তো কেউ জানায়নি। আগে রুগী নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু কোভিডের পর থেকে এখন বন্ধ আছে। এখন ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসা হয়। তবে এই নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক। তিনি বলেন,যা বলার বলবেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
ভাতার পঞ্চায়েতের সদস্য পার্থ সারথী মণ্ডল বলেন, সব গাড়ি ঠিক আছে। অ্যাম্বুলেন্স খারাপ থাকলে বিধায়ককে জানানো হয়নি। আসলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক নিজের খেয়ালখুশি মত চলেন। যে টোটো করে মেনকা কোঁড়াকে ভাতার গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ভাতার স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় সেই টোটো চালক বলেন, তখন তো উনি হেঁটেই টোটোতে চাপলেন। মৃতার স্বামী অসিত কোঁড়া বলেন, ভাতার হাসপাতালে দেখাতে নিয়ে যাই। দু-বোতল স্যালাইন দিল। তারপর বর্ধমানে নিয়ে যেতে বলে। আমি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। হাসপাতালে বলল, অ্যাম্বুলেন্স নেই। গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কাছে টাকা ছিল না। তাই ট্রেন ধরার জন্য টোটোয় করে স্ত্রীকে নিয়ে আসি। ভাতার স্টেশনে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময় স্ত্রী মারা গেল।”
অসিত কোঁড়া ভাতার রেলস্টেশন চত্বরে এটি গাছের তলায় স্ত্রীর দেহটি রেখে কাঁদছিলেন। চোখে পড়ে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম, শেখ আবসার এমন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার। তারা ঘটনার কথা শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা তুলে গাড়িভাড়া করে দেন। তারপর অসিতবাবু তার স্ত্রীর দেহটি নিয়ে বর্ধমানে ফেরেন। যদিও পুলিস সূত্রে জানা যায় এনিয়ে থানায় কিছু জানানো হয়নি। চিকিৎসকরা প্রেশক্রিপনে উল্লেখ করেন ওই রোগী তিন চারদিন খাওয়া দাওয়া করেননি। তাই প্রচণ্ড দুর্বল ছিল।