হায়দরাবাদ ১ (মনোজ)
ইস্টবেঙ্গল ১ (জিকসন)
জয়ের হ্যাটট্রিক হল না ইস্টবেঙ্গলের। আইএসএলে পচা শামুকে পা কাটল তাদের। শনিবার এগিয়ে গিয়েও রক্ষণের ভুলে ১-১ ড্র করল হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। জিকসন সিংহ দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিলেও ৯০ মিনিটে সমতা ফেরান লাল-হলুদের প্রাক্তন ফুটবলার মনোজ মহম্মদ। রক্ষণের ভুলে গোল খেতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে, যা ম্যাচের পর নিঃসন্দেহে চিন্তায় রাখবে কোচ অস্কার ব্রুজ়োকে। এমন দলের বিরুদ্ধে ড্র করল ইস্টবেঙ্গল, যারা ঘরের মাঠে আগের ১৮টি ম্যাচে জিততে পারেনি। ড্রয়ের ফলে পয়েন্ট তালিকায় উপরের দিকে ওঠা হল না ইস্টবেঙ্গলের। ১৩ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তারা থাকল ১১ নম্বরেই। হায়দরাবাদও ১২ নম্বরে থাকল।
প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলার মধ্যে কোনও ছন্দবদ্ধ ভাব ছিল না। হায়দরাবাদের মতো দুর্বল দল পেয়েও ইস্টবেঙ্গল বিপক্ষের রক্ষণে দাঁত ফোটাতেই পারছিল না। আলেক্স সাজি বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন দিমিত্রি দিয়ামানতাকোসকে। উইং দিয়ে নন্দকুমারও আক্রমণ করতে পারছিলেন না। কারণ যে দিক দিয়ে নন্দ খেলছিলেন সে দিকের মাঠের অবস্থা ভাল ছিল না। ফলে বল নিয়ে উঠতে পারছিলেন না লাল-হলুদ ফুটবলার। ইস্টবেঙ্গল আক্রমণে ওঠার সময় হায়দরাবাদের ৯ জন ফুটবলার নিজেদের বক্সের আশেপাশে চলে আসছিলেন। ফলে পাস খেলার জন্য ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাচ্ছিল না ইস্টবেঙ্গল।
রেফারির দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি একটি পেনাল্টির আবেদন করেছিল ইস্টবেঙ্গল। বল লেগেছিল সাজির হাতে। রেফারি কর্ণপাত করেননি ইস্টবেঙ্গলের আবেদনে। এর পর ক্লেটন একটি ভাসানো বল পেয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হায়দরাবাদ গোলকিপার আরশদীপ সিংহ লাফিয়ে উঠে বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। তাঁর হাঁটু সোজা গিয়ে লাগে ক্লেটনের বুকে। ব্রাজিলীয় ফুটবলার মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকেন। রেফারি পেনাল্টি তো দেনইনি, উল্টে ফাউল দেন হায়দরাবাদের পক্ষে। ক্লেটনের আঘাত নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হলেও তা সঙ্গে সঙ্গেই দূর হয়ে যায়। প্রাথমিক শুশ্রূষার পর সুস্থ হয়ে যান তিনি।
ইস্টবেঙ্গলকে ভুগিয়েছে প্রচুর মিস্ পাস। দু’-তিনটি পাসের পরেই বিপক্ষের পায়ে বল জমা করে দিচ্ছিল তারা। ফলে আবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছিল আক্রমণ। সুযোগ পেয়ে হায়দরাবাদও চেপে ধরেছিল ইস্টবেঙ্গলকে। দু’-একটি সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে গিয়ে গোলটাই করতে পারেনি। হায়দরাবাদকে ভুগিয়েছে অনভিজ্ঞতা।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অন্য ইস্টবেঙ্গলকে পাওয়া যায়। আক্রমণের ঝাঁজ অনেক বেড়ে যায় তাদের। প্রান্ত বদল করায় নিজের হারানো ছন্দ খুঁজে পান নন্দও। উইং দিয়ে অনেক বেশি সচল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বার বার উঠে এসে ক্রস ভাসাচ্ছিলেন। তবে যেটা আসল কাজ, সেই গোলটাই হচ্ছিল না।
তা আসে ৬৪ মিনিটে। বক্সের বাইরে দিয়ামানতাকোসকে ফাউল করায় ফ্রিকিক পায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেটনের শট বারে গিয়ে লাগে। কাছেই ছিলেন জিকসন। ফিরতি বলে লাফিয়ে উঠে হেড করে জালে জড়িয়ে দেন। এই গোলের পরে খেলা জমে ওঠে। দু’দলই গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ইস্টবেঙ্গল আরও গোল করার জন্য ঝাঁপায়। হায়দরাবাদও সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
নন্দকুমারের একটি শট বাঁচান বিপক্ষের গোলকিপার। তবে শেষের দিকে ইস্টবেঙ্গলের খেলায় হঠাৎই সেই ঝাঁজ ক্রমশ কমতে থাকে। আবারও ফিরে আসে মিস্ পাসের বহর। মনঃসংযোগের সামান্য ভুলেই গোল খায় তারা। কার্ড সমস্যায় মহম্মদ রাকিপ না থাকায় রাইট ব্যাক হিসাবে খেলানো হয় প্রভাত লাকরাকে। গোটা ম্যাচেই তিনি নজর কাড়তে পারেননি। শেষ বেলার ভুল করে লাল-হলুদকে ডুবিয়ে দিলেন। ইস্টবেঙ্গলের বক্সের বাইরে থেকে বাঁ দিকে মনোজকে পাস দিয়েছিলেন কোরিয়া। চলতি বলেই বাঁ পায়ের শটে পুরনো দলের বিরুদ্ধে গোল করে যান মনোজ।