Duttapukur Blast: ২১ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার ছিন্নভিন্ন হাত-মুণ্ডু! দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার

দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার। নীলগঞ্জ থেকে গ্রেফতার সফিকুল ইসলাম। ধৃত সফিকুল ইসলাম কেরামতের পার্টনার হিসেবেই পরিচিত। কেরামতের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ইনি। রবিবার রাতভর তল্লাশি চলে দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে। বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৮৬, ৩০৪, ৩০৮, ৩৪, ৯বি দ্য এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্ট, ২৪/২৬ ফায়ার সার্ভিস অ্যাক্টে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এদিকে রবিবার দুপুরে বিস্ফোরণের পর সোমবার সকালেও উদ্ধার হয়েছে ছিন্ন ভিন্ন দেহাংশ। ঘটনার প্রায় ২১ ঘণ্টা পর, ঘটনাস্থল থেকে ৮০ মিটারের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে হাত। এক প্রতিবেশীর বাঁশ বাগানের পাশে পরে মুণ্ডু। পুকুরে ভাসছে দেহ।

প্রসঙ্গত, মোচপোল গ্রামে সারা রাত ধরে চলেছে পুলিসের তল্লাশি। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক হাত দূরেই দুটি বাড়িতে রেড করে জেলা পুলিস। বাজি ও বাজি তৈরির রাসায়নিক মজুত রয়েছে বলে খবর আসে পুলিসের কাছে। রাত ১টার কিছু পর থেকে পুলিসের রেড শুরু হয়। প্রথমে পুলিস একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ঢোকে। তালা ভেঙে ঢুকে বেশ কয়েকটি বস্তা পায় পুলিস। তাতে সাদা পাউডার পায়। এরপর শেখ শাহির হোসেন নামে আরেক ব্যক্তির গোডাউনে রেড করে পুলিস। গোডাউনের সদর দরজা বন্ধ থাকায়, পাঁচিল টপকে পুলিস ভিতরে গিয়ে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি দেখতে পায়। যদিও রাতে আর তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সকালে বম্ব স্কোয়াড, দমকল গিয়ে তা উদ্ধার করবে বলে জানিয়েছে পুলিস। গোডাউনের সামনে পুলিস পিকেটিং করা হয় রাতেই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৩ বছর ধরে ওই গোডাউনে বাজি মজুত করা হচ্ছে। রোজ-ই গাড়ি করে বাজি নিয়ে যাওয়া হয়। এখন স্থানীয়দের দাবি, তল্লাশি চালানোর সময় পুলিস নাকি প্রথমে বাজি পায়নি! তারপর পুলিস বেরিয়ে যেতেই স্থানীয়রা আবার পুলিসকে ডেকে এনে বাজি উদ্ধার করায়। পুলিস পিকেটিং করা হলেও, রীতিমতো রাত জেগে গোডাউন পাহারা দেন স্থানীয়রা। কারণ তাঁদের অভিযোগ, পুলিস বাজি সরিয়ে দিতে পারে! শেখ সাহির তৃণমূল নেতা। তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিস! শেখ সাহিরের পাশাপাশি বাজিকাণ্ডে উঠে এসেছে আরও একটি নাম। আবদুল মহিদ। এলাকার মানুষের অভিযোগ, এই আবদুল মহিদ এলাকায় প্রোমোটারিংয়ের কাজের পাশাপাশি এই নিষিদ্ধ বাজি কারখানারও মাস্টারমাইন্ড। রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ একজন আইপিএস পদমর্যাদা অফিসার সহ বেশ কিছু পুলিস আধিকারিক তাঁর বাড়িতে যান। কিন্তু বাড়ির দরজা না খোলায় পুলিসকে ফিরে আসতে হয়।

ব্যবধান মাস তিনেক। ফের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ! এগরার ভয়াবহ স্মৃতি ফিরল দত্তপুকুরে! রবিবার দুপুরে বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে তছনছ দত্তপুকুরের গ্রাম। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে গোটা একটা বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। উড়ে যায় আশপাশের একাধিক বাড়ির ছাদ। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গোটা এলাকা। ঝলসে যায় ওই বাজি কারখানার শ্রমিকরা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে দেহ। এমনকি দেহাংশ ছিটকে কয়েকশো মিটার দূরে বাড়ির ছাদে-উঠোনে গিয়েও পড়েছে। মৃতের তালিকায় রয়েছে ৮ বছরের এক বালকও। বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেছেন আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি। ওদিকে মালদা থেকে ফিরে রাতেই ঘটনাস্থলে যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ। বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখে রাজ্যপাল জানান, ‘কার্যকরী ব্য়বস্থা নেওয়া হবে।’

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই চলছিল এই বাজির কারবার। কিন্তু কীভাবে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই বাজির কারবার চলতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিসকে বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পুলিস সব দেখে, জেনেশুনেও চুপ থাকে। অভিযোগ, আগে নিম পুকুরিয়া এলাকায় একটি বাজি কারখানা চালাত কেরামত। এরপর চলতি বছরের মে মাসে যখন পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্ফোরণ ঘটে, তখন রাজ্যজুড়ে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে তৎপর হয় পুলিস। সেইসময়ই গ্রেফতার করা হয়েছিল কেরামতকে। কারণ, ২০২১ সালের পর কেরামতে আর বাজির কারখানার লাইসেন্স ছিল না। কিন্তু জামিন পেয়ে ফিরে দত্তপুকুরের মোচাপোলে ফের বাজি কারখানা চালু করে অভিযুক্ত কেরামত। সেই কারখানাতেই এবার বিস্ফোরণ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.