শতবর্ষের পথে বাঁকুড়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজো।বাংলার ১৩৩৬ এবং ইংরেজির ১৯২৯ সালে বৃটিশ শাসন থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে শক্তিরূপিনী দেবী দুর্গার আরাধনার আয়োজন করেন জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।সূচনা কালেই এই পূজা শহরে আলোড়ন ফেলে। সেই সময় একই সাথে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণেরও এক দৃষ্টান্ত রাখেন পুজোর উদ্যোক্তারা।মায়ের পালকি ও ঘট আনতে মেথর সম্প্রদায়ের মানুষরা অংশ নেয়। সেই রীতি আজও বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছেন বর্তমানের পুজো উদ্যোক্তারা।
জেলার বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী গোবিন্দ প্রসাদ সিংহ,শিশুরাম মন্ডল, ধীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, রামলোচন মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের সাথে জেলার বিভিন্ন পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন পূজার্চনায়।
বৃটিশ আমলে বাঁকুড়া শহরের সুভাষ রোডে এক পুরাতন জীর্ণ বাড়িতে পুজো শুরু করেন তারা। পুজোর জন্য স্হায়ী জায়গা না মেলায় পরের বছরে রাণীগঞ্জ মোড়ে, তারপর দোলতলা আটচালায়, কখনও দেশবন্ধু ব্যায়ামাগারে, হরিশংকর বাবুর বেড়ে, নূতনগঞ্জ ধর্মশালায়, বাসন্তী সিনেমা হল প্রাঙ্গণে, চন্ডীদাস সিনেমা হল প্রাঙ্গণ, টাউন বয়েজ হাইস্কুলে, এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলে অর্থাৎ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পুজো হওয়ার পর ১৯৫১ সালে বঙ্গবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুজো শুরু হয়। তারপর থেকেই বঙ্গবিদ্যালয় প্রাঙ্গণই এখন একরকম স্হায়ী ঠিকানা এই পুজোর।
এই পুজোতে সর্বস্তরের মানুষ সম্মিলিত ভাবে অংশ নেওয়ায় এটিকে জেলার প্রথম সর্বজনীন পুজো হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শতবর্ষ পূরণে এই পুজো এগিয়ে চললেও পুজো পরিচালনার নির্দিষ্ট কোনও উৎস নেই, সেই কারণে উদ্যোক্তাদের অনুদানের উপর নির্ভর করতে হয়। সূচনাপর্ব থেকেই বহু মানুষ সহযোগিতা করে চলেছেন, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমান পুজো কমিটির কার্যকরী সভাপতি দীপঙ্কর দে বলেন, পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি নেই। এই পুজোর আলাদা মর্যাদা ও আভিজাত্য রয়েছে। অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে সূচারু রূপে এখানে পূজার্চনা হয়। এটাই এখানের বৈশিষ্ট্য।