একের পর এক মামলার চাপে কলকাতা শহরে গারদ (লকআপ) বাড়ানোর পথে সিবিআই। দাবি, নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার মতো লোকের সংখ্যা নিত্যদিন বাড়ছে। সেই তুলনায় গারদ নেই তাদের। গারদের পাশাপাশি নতুন অফিসও খুলতে চায় সিবিআই।
সম্প্রতি নতুন অফিসের জন্য আলিপুরের ২/৫ এ জাজে’স কোর্ট রোডের বিএসএনএল-এর একটি ১০ তলা বাড়ির অধিকাংশ ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। সেখানে অফিস লাগোয়া গারদও বানানো হচ্ছে। বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় লোকেদের গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এরপরে সেখানে গিয়ে রাখা হতে পারে।
একটা সময় এমন ছিল যে কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে তাদের নিজস্ব কোনও গারদ ছিল না। সারদা মামলা শুরুর আগে কলকাতায় সিবিআই তেমন কাউকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এমনটাও বিশেষ শোনা যায়নি।
কালের নিয়মে মামলা বেড়েছে। রাজ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার দায়িত্ব বর্তেছে সিবিআইয়ের কাঁধে। সারদা মামলাতেই দেখা গিয়েছে, গ্রেফতারের পরে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সারা দিন জেরার পরে রাতে পাশের থানায় গিয়ে রাখতে হয়েছে অভিযুক্তকে। পর দিন সকালে আবার সেখান থেকে আনতে হয়েছে দফতরে।
বর্তমানে কলকাতা নিজাম প্যালেসে দু’টি তলা এবং সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে দু’টি তলায় সিবিআইয়ের অফিস রয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, ২০১৪য় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। সারদা, রোজভ্যালি-সহ প্রায় ২০০টিরও বেশি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্ত শুরু হয় সিজিওর অফিস থেকে। পরে সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে নিজস্ব গারদ তৈরি করা হয়। নিজাম প্যালেসের অফিসে অবশ্য প্রথম থেকেই তিনটি গারদ ছিল।
সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৯-এর পর থেকে পূর্বাঞ্চলীয় দফতরে একের পর এক মামলা আসতে থাকে। গরু, কয়লা, নির্বাচন পরবর্তী হিংসা এবং সম্প্রতি শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। এত তদন্ত সামলাতে গিয়ে কম পড়ে গিয়েছে অফিসের জায়গাও। সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তার কথায়, অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের গারদে রাখা নিয়ে জায়গার নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। তা ছাড়া বিভিন্ন মামলার যোগসূত্রে দিল্লির সদর দফতর ও ভিন্ রাজ্যের অফিসারেরা তদন্তে সহযোগিতা করতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন।
সম্প্রতি মাস ছয়েক আগে বিএসএনএল-এর ওই অফিস ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। বিএসএনএল সূত্রের খবর, আলিপুরের ১০ তলা বাড়িটির অধিকাংশ অফিসই এখন খালি। সেখানে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি অফিস রয়েছে। সিবিআইয়ের কর্তারা বিএসএনএল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে অফিস তৈরির জন্য চুক্তি করেছেন বলে সূত্রের খবর।
সিবিআই সূত্রের দাবি, এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) মামলার জাল বহুদূর বিস্তৃত। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশ রয়েছে। এর পরে গরু, কয়লা ও নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনার মতন স্পর্শকাতর মামলাগুলি রয়েছে। রয়েছে, সারদা-সহ অর্থলগ্নি সংস্থার মামলা ও নারদ কাণ্ড। ওই মামলাগুলি তদন্ত দ্রুত শেষ করার জন্য আদালতের একাধিক নির্দেশ রয়েছে। জায়গার অভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে গারদে রাখার সমস্যায় তদন্ত গতি হারাচ্ছে।
সম্প্রতি ওই ১০ তলা ভবনটি পরিদর্শন করেছেন পূর্বাঞ্চলীয় ও দিল্লি সদর দফতরের কর্তারা। প্রাথমিক ভাবে ওই ভবনের ‘বেসমেন্টে’ গারদ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রায় একসঙ্গে ১৪ থেকে ১৫ টি গারদ আপাতত তৈরি করা হবে বলে সূত্রের খবর। এক-একটি মামলার জন্য আলাদা অফিস তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি দিল্লি ও ভিন্ রাজ্য থেকে আসা তদন্তকারীদের জন্য অতিথিশালাও তৈরি করার পরিকল্পনা হয়েছে।
সম্প্রতি সপ্তাহখানেক আগে ওই বাড়িটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কয়েক মাসের মধ্যেই এই অফিসটি তৈরি হয়ে যাবে বলে আশাবাদী সিবিআইয়ের কর্তারা।