মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর সময়ে পুলিশ ধরলে জরিমানা দিতে হয়। একই সঙ্গে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করাতেই পারে। তাতে ছ’মাস থেকে দু’বছর পর্যন্ত কারাবাসও হতে পারে। সেই সঙ্গে জরিমানাও দিতে হয়।
তবে এটাও জেনে রাখা দরকার যে, মদ্যপান করে গাড়ি বা বাইক চালালেই পুলিশ জরিমানা করতে পারে না। দিতে পারে না সাজাও। চালক কতটা পরিমাণে পান করে গাড়ি চালাতে পারবেন তা-ও নির্দিষ্ট করা রয়েছে ভারতীয় ট্র্যাফিক আইনে। ওই আইনের ১৮৫ ধরায় বলা রয়েছে যদি ১০০ গ্রাম রক্তে ৩০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত অ্যালকোহল থাকে তবে সেটা দণ্ডনীয় নয়। এর উপরে হলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। এই নিয়ম দুই, তিন, চার— সব চাকার গাড়ির ক্ষেত্রেই এক।
আইনে আরও একটি বিষয় রয়েছে। প্রথম বার কেউ অতিরিক্ত মদ্যপান করে গাড়ি চালালে সাজা ও জরিমানা কম। দু’হাজার টাকা এবং ছ’মাসের কারাবাস। কিন্তু একাধিক বার হয়ে গেলেই জরিমানা ৩ হাজার। আর কারাদণ্ড দু’বছর পর্যন্ত হতে পারে। কলকাতা-সহ রাজ্যে পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই দেখা যায় চালক মত্ত ছিলেন। পুজোর সময়ে যাতে এমনটা না হয় তার জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের পক্ষে প্রচার শুরু হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাস্তায় এবং বিশেষ করে চেক পোস্টে পুলিশ ‘ব্রেথালাইজ়ার যন্ত্র’ নিয়ে থাকবে। সেই যন্ত্রে ফুঁ দিলে বোঝা যায় রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ কত। সেটা ৩০ মিলিগ্রামের বেশি হলেই তা দণ্ডনীয়। পুলিশ গাড়িও আটকে রাখতে পারে।
এ নিয়ে চিকিৎসক মৈনাক পাল বলেন, ‘‘সব চেয়ে ভাল, মদ্যপান করে গাড়ি না চালানো। কারণ, এতে নিজের তো বটেই অন্যের বিপদ ঘটতে পারে। মদ্যপানের পরিকল্পনা এমন ভাবে করা উচিত যাতে গাড়ি বা বাইক না চালাতে হয়।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, রক্তে কতটা অ্যালকোহল থাকলে কী কী সমস্যা হতে পারে। তিনি জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম রক্তে অ্যালকোহলের মাত্র ০.০৫ গ্রাম হয়ে গেলেই সমস্যা শুরু হয়ে যায়। অতটা পরিমাণে মদ রক্তে মিশলেই বেশি কথা বলার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এই সময়েই অনেকে ‘আমি ঠিক চলে যাব’ ভেবে গাড়ি চালান বলেও দাবি মৈনাকের। তিনি আরও জানিয়েছেন, রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা ০.১৫ গ্রাম হয়ে গেলেই নেশা চরমে পৌঁছায়। আবেগ বাড়তে থাকে এবং বমিভাব তৈরি হয়। এরও বেশি ০.৩০ গ্রাম মদ ১০০ গ্রাম রক্তে মিশলে ঝুঁকি আরও বেশি হয়ে যায়। এই সময়ে অপরের সাহায্য ছাড়া হাঁটার সমস্যা তৈরি হয়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আর রক্তে এরও বেশি অ্যালকোহলের মাত্রা হয়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কেউ কেউ কোমা পর্যায়ে চলে যেতে পারেন। এই তথ্য জানিয়ে মৈনাক বলেন, ‘‘নেশা করার সময় মাত্রাজ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। সেটা না থাকলেই বিপদ। আর গাড়ি চালানো তো শুধু নিজের জন্যই নয় গাড়িতে থাকা যাত্রী এবং রাস্তায় থাকা অন্য যানবাহনের জন্যও বিপদ তৈরি করতে পারে।’’