হরিদেবপুর কাণ্ডে নাটকীয় মোড়। মা নয়, ঘরে আগুন লাগিয়েছিল ১৬ বছরের মেয়েই। মায়ের সঙ্গে বনিবনা ছিল না। ফলে মাকে ফাঁসাতেই ছক কষে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। প্রথমে মায়ের সিম কার্ড ক্লোন করে। তার মায়ের সঙ্গে কার কথাবার্তা হয় সেই সব বিষয়ে নজর রাখতে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। এরপরই মায়ের সঙ্গে তার পুলিস বন্ধুর ভুয়ো চ্যাটের টেমপ্লেট তৈরি করে ফেলে সে। প্রেমিক তার মাকে ঘরে আগুন লাগিয়ে মেয়েকে খুন করতে বলছে, এমন ভুয়ো চ্যাট তৈরি করে সেই মেয়ে।
তারপর গতকাল ভোরবেলায় যখন মা ও দিদা ঘুমাচ্ছিল, সেই সময় মোমবাতি দিয়ে ঘরে আগুন দেয়। তারপর থানায় এসে মাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করে। এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করে যে, তার মা তাকে খুনের জন্য ঘরে আগুন দিয়েছিল। কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস মা ও তাঁর বন্ধুকে গ্রেফতার করলেও, কিছু জায়গায় ধোঁয়াশা ছিল। তাই দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তারপরই সামনে আসে এই নয়া তথ্য। ইতিমধ্যে নয়া এই তথ্য আদালতে জানাচ্ছে পুলিস। মিথ্যে মামলা দায়ের করায় কিশোরীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হতে পারে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে জিজ্ঞেসাবাদ করা হচ্ছে তার বাবাকেও। এমনকি এর আগেও একবার পুলিসের কাছে মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল ওই কিশোরী।
প্রসঙ্গত, গতকাল ভোর ৪ টো নাগাদ হরিদেবপুরের ওই ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। পুলিস-দমকল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। পুলিসের কাছে এরপরই কিশোরী মেয়ে দাবি করে যে, মায়ের সঙ্গে প্রেমিকের কথোপকথনে শুনতে পেয়েছে সে! বাথরুম থেকে কাউকে ফোন করছিলেন তার মা! মাকে সে ফোনে বলতে শোনে, “ঘরে আগুন লাগলেও মেয়ে বেঁচে গিয়েছে”! এ থেকেই সন্দেহ হয় তার! পরে মায়ের মোবাইল ঘেঁটে দেখে সে! তা দেখেই ওই সে জানতে পারে যে, মা প্রেমিকের কথা মতো তাকে আগুনে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টা করছে!
এমনকি ওই কিশোরী এও দাবি করে যে, টেলিগ্রামে চ্যাট থেকে সে জানতে পারে যে, তার মা প্রেমিকের কথা মতো তাকে খুনের চেষ্টা করছেন! চ্যাটে নাকি ওই প্রেমিক কিশোরীর মাকে কখনও অ্যাসিড দিয়ে তাকে মারতে বলছে তো কখনও আগুনে পুড়িয়ে মারতে বলছে! আবার এমনভাবে আগুন লাগাতে বলা হয় যাতে মেয়েটির মায়ের জিনিসপত্রেও আগুন লাগে! যাতে কেউ মায়ের উপর সন্দেহ করতে না পারে! সবমিলিয়ে মাকে ফাঁসাতে বেশ নাটকীয় গল্প ফাঁদে ওই কিশোরী। এমনকি ভুয়ো চ্যাটের স্ক্রিনশট ও প্রিন্টআউট নিয়ে হরিদেবপুর থানায় এসে ওই কিশোরী অভিযোগ দায়ের করে।
প্রসঙ্গত, জানা গিয়েছে, ওই মহিলার স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের দাম্পত্য সমস্যা। ডিভোর্স না হলেও মহিলা মেয়েকে নিয়ে আলাদা-ই থাকেন। মেয়েকে নিয়ে হরিদেবপুরের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর খাদ্য দফতরের চাকরির পান ওই মহিলা। এদিকে ডিভোর্স না হলেও একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে বারাসতের পুলিস লাইনের কনস্টেবল প্রসূন মান্নার সঙ্গে আলাপ হয় সোনালি চন্দা নামে ওই মহিলার। তারপরই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।