শুভাংশুদের নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে নামল ‘ড্রাগন’! শারীরিক পরীক্ষার পর একে একে বেরিয়ে এলেন নভশ্চরেরা

অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! ভারতীয় সময় অনুযায়ী ঘড়িতে ঠিক বেলা ৩টে ১ মিনিট। শুভাংশু শুক্ল-সহ চার নভশ্চরকে নিয়ে ভাসতে ভাসতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে এল স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’।

ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে পৃথিবীতে ফিরলেন শুভাংশুরা। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো উপকূলে তখন অবশ্য রাত! নির্ধারিত সময়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে শুভাংশুদের ক্যাপসুল। এই সময়ে ক্যাপসুলের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার। ধীরে ধীরে তা কমতে কমতে ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় নেমে আসে। এর পর একে একে খুলে যায় চারটি প্যারাশ্যুট। ভাসতে ভাসতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে আসে ‘ড্রাগন’।

প্যারাশুটে করে নেমে আসছে ‘ড্রাগন’।

প্রশান্ত মহাসাগরে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ‘রিকভারি ভেহিকল’। তৈরি ছিল স্পেসএক্সের একটি দল। অবতরণের পরেই তারা শুভাংশুদের ক্যাপসুলের কাছে পৌঁছে যায়। এর পর ক্যাপসুলটিকে তুলে নেওয়া হয় জাহাজে। এর কিছু ক্ষণ পর ক্যাপসুলের হ্যাচ খুলে যায়। ভিতরে ঢোকেন বিশেষজ্ঞদের দল। শারীরিক পরীক্ষার পর ভিতর থেকে বার করে আনা হয় চার নভশ্চরকে। প্রথমে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন কমান্ডার পেগি হুইটসন। এর পরেই বার করে আনা হয় শুভাংশুকে। তাঁরও মুখে হাসি, হাত নাড়তে নাড়তে ‘ড্রাগন’ ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

অন্য দিকে, ‘ঘরের ছেলে’র ঘরে ফেরা নিয়ে ইতিমধ্যেই উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গিয়েছে শুভাংশুর শহর লখনউয়ে! শুভাংশুর বাবা শম্ভুদয়াল শুক্ল ও মা আশা শুক্ল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছেলের এই সাফল্যে তাঁরা গর্বিত। শুভাংশুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘ঐতিহাসিক অভিযান সেরে পৃথিবীতে ফিরে আসা গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লকে স্বাগত জানাই! ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রেখে তিনি অসম্ভব নিষ্ঠা, সাহস এবং উদ্যমের পরিচয় দিয়েছেন। কোটি কোটি স্বপ্নকে অনুপ্রাণিত করেছেন শুভাংশু। এই অভিযান আমাদের নিজস্ব মানব মহাকাশ অভিযান ‘গগনযান’-এর দিকে আরও একটি মাইল ফলক।’’

‘ড্রাগন’ ক্যাপসুল থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে এলেন শুভাংশু শুক্ল।

গত ২৫ জুন ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আইএসএসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন শুভাংশুরা। নাসার ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ নামে এই অভিযানে ভারতীয় নভশ্চর ছাড়াও রয়েছেন ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজ়নিউস্কি এবং টিবর কাপু। ১৮ দিন আইএসএসে কাটানোর পর সোমবার শুভাংশুদের প্রত্যাবর্তন শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের একটু পরে বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়) মহাকাশকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয় শুভাংশুদের মহাকাশযান। শুরু হয় পৃথিবীর দিকে ফিরতি যাত্রা। ২৩ ঘণ্টার দীর্ঘ সেই যাত্রার শেষে ফিরলেন চার নভশ্চর। তবে এখানেই শেষ নয়! বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ফেরার পরেও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অপেক্ষা করে রয়েছে শুভাংশুদের জন্য। প্রথমেই নভশ্চরদের বেশ কয়েক দফা মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। এত দিন মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে কাটানোর পর পৃথিবীতে ফিরে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়। সে জন্য আগামী সাত দিন বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে চার নভশ্চরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.