কোহলির শতরান ম্লান গম্ভীরের এক ভুলে, দোসর জঘন্য ফিল্ডিং! দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে শনিবার ‘ফাইনালে’ নামবে ভারত

ইনিংসের বিরতিতে ঢোঁক গিলেছিলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। তাঁর ও বিরাট কোহলির শতরানে ভর করে ভারত ৩৫৮ রান করলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না রুতুরাজ। কারণ, শিশির। রাঁচীর থেকেও বেশি শিশির পড়ার পূর্বাভাস ছিল রায়পুরে। সেটাই হল। শিশির পড়তেই ৩৫৯ রান মনে হল ২৫৯। বল গ্রিপ করতে পারলেন না বোলারেরা। তার সুবিধা নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এডেন মার্করাম, টেম্বা বাভুমা, ম্যাথু ব্রিৎজ়কে, ডেওয়াল্ড ব্রেভিসদের ব্যাটে হাসতে হাসতে ৩৫৯ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের মাটিতে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাড়া করল তারা। এক দিনের সিরিজ়ে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা। শনিবার বিশাখাপত্তনমে হবে সিরিজ়ের ফয়সালা।

ভারতের এই হারের নেপথ্যে রয়েছে কোচ গৌতম গম্ভীরের এক ভুল। রুতুরাজ ও কোহলির জুটিতে ভারত যে জায়গায় ছিল তাতে অন্তত ৩৮০ রান হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার ছ’নম্বরে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নামিয়ে দিলেন গম্ভীর। যেখানে রবীন্দ্র জাডেজার মতো ক্রিকেটার রয়েছেন, সেখানে কেন বার বার গম্ভীর ওয়াশিংটনের উপর ভরসা করছেন তা তিনিই জানেন। ভারতের রান তোলার গতি এক ধাক্কায় কমিয়ে দিলেন ওয়াশিংটন। ফলে ৩৮০ রানের বদলে ৩৫৮ রান হল। আর ২০ রান বেশি থাকলে হয়তো জিতে যেত ভারত। গম্ভীরের ভুলে তা হল না। পাশাপাশি ভারতের জঘন্য ফিল্ডিংও ভোগাল দলকে।

cricket

ব্যর্থ রোহিত-যশস্বী

আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ যশস্বী জয়সওয়াল। শুভমন গিল না থাকায় এই সিরিজ়ে ওপেনারের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। রাঁচীতে রান পাননি। রায়পুরেও পেলেন না। শুরুটা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই শর্ট বলের সামনে সমস্যায় পড়লেন যশস্বী। মার্কো জানসেনের বাউন্সার সামলাতে না পেরে ২২ রানের মাথায় আউট হলেন তিনি।

আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন রোহিত শর্মা। এই ম্যাচেও শুরুটা খারাপ করেননি। তিনটি চার মারেন। কিন্তু নান্দ্রে বার্গারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে আউট হন তিনি। বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে আরও এক বার সমস্যায় পড়লেন তিনি। ৮ বলে ১৪ রান করে আউট হলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।

জোড়া শতরান কোহলির

ফর্মে রয়েছেন কোহলি। রাঁচীতে শতরান করেছিলেন। নিখুঁত ইনিংস খেলেছিলেন। রায়পুরে নিখুঁত ইনিংস না খেললেও আরও একটি শতরান করলেন। লুঙ্গি এনগিডির বলে ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু করেন কোহলি। যদিও পরে বড় শটের বদলে দৌড়ে রানের দিকেই বেশি ভরসা রাখলেন তিনি। মাঝে দু’বার ক্যাচও তোলেন কোহলি। কিন্তু ফিল্ডার না থাকায় বেঁচে যান। সেটা কাজে লাগিয়ে শতরান করেন। যদিও আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচে বড় শতরান করতে পারেননি তিনি। ৯৩ বলে ১০২ রান করে টাইমিংয়ের গন্ডগোলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কোহলি।

শতরান রুতুরাজের

ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের হয়ে ভাল খেলায় এই সিরিজ়ে সুযোগ পেয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। রাঁচীতে রান পাননি। ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেছিলেন। রায়পুরে মিডল অর্ডারে ভরসা জোগালেন তিনি। চার নম্বরে নেমে কোহলির থেকে বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করলেন। তিনি হাত খুলে খেলায় সুবিধা হল কোহলিরও। শতরান করলেন রুতুরাজ। এই ইনিংস তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। ভারতের এক দিনের দলে জায়গা কিছুটা পাকা করলেন রুতুরাজ। শেষ পর্যন্ত ৮৩ বলে ১০৫ রান করে ফিরলেন রুতুরাজ। কোহলি ও তাঁর ১৫৬ বলে ১৯৫ রানের জুটি ভারতের বড় রানের ভিত গড়ে দেয়।

আবার ব্যর্থ ওয়াশিংটন

ওয়াশিংটন সুন্দরকে মিডল অর্ডারে খেলানোর পরিকল্পনা কাজে লাগছে না। রাঁচীতে পাঁচ নম্বরে নেমে রান পাননি। রায়পুরে ছ’নম্বরে নামেন। বল নষ্ট করেন। তিনি নামার পর ভারতের রান তোলার গতি ধাক্কা খায়। ৮ বলে ১ রান করে রান আউট হন ওয়াশিংটন। বল সরাসরি ফিল্ডারের হাতে গিয়েছিল। কোনও ভাবেই তাতে রান হয় না। কিন্তু রান নিতে যান ওয়াশিংটন। উইকেট ছুড়ে দিয়ে ফেরেন তিনি।

ফিনিশার রাহুল-জাডেজা

রাঁচীতেও ভারতের হয়ে ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাডেজাকে। রায়পুরেও সেই কাজটা করলেন তাঁরা। জাডেজা অবশ্য ধীরে খেলেছেন। বড় শট মারতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু রাহুল এই ম্যাচে অনেক বেশি আগ্রাসী ছিলেন। শুরু থেকে বড় শট খেলছিলেন। পর পর দুই ম্যাচে অর্ধশতরানও করলেন রাহুল। ৪৩ বলে ৬৬ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। জাডেজা করলেন ২৭ বলে ২৪ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে ১৮ রান নেন তাঁরা। ফলে ভারতের স্কোর ৩৫৮ রানে পৌঁছোয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.