জোড়া শতরান! সিরিজ়ে ভারত জিতুক বা হারুক, জিতে গেলেন বিরাট

গৌতম গম্ভীরের পাশাপাশি এই সিরিজ় পরীক্ষা ছিল বিরাট কোহলিরও। ভারতের এক দিনের দলে তিনি জায়গা ধরে রাখতে পারবেন কি না, ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের দলে থাকবেন কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করছিল এই সিরিজ়ের উপর। প্রথম দুই ম্যাচের পর বলা যায় বিরাট পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারত সিরিজ় জিতুক বা হারুক, বিরাট জিতে গিয়েছেন।

রাঁচীর পর রায়পুরে শতরান করেছেন কোহলি। এক দিনের ক্রিকেটে ১১ বার পর পর দু’ম্যাচে শতরান করেছেন তিনি। এই পরিসংখ্যানে কোহলির পর এবি ডিভিলিয়ার্স। ছ’বার এই কীর্তি করেছেন তিনি। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে কতটা ধারাবাহিক তিনি।

তবে রান পাননি রোহিত শর্মা। আগের ম্যাচে ৫৭ রান করেছিলেন। এই ম্যাচেও শুরুটা ভাল করেছিলেন। তিনটি চার মেরে নান্দ্রে বার্গারের বলে খোঁচা মারেন। বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আবার উইকেট দিয়ে এসেছেন রোহিত। ৮ বলে ১৪ রান করেছেন। রায়পুরের উইকেট দেখে বোঝা যাচ্ছে, টিকে থাকতে পারলে রান পেতেন। সুযোগ নষ্ট করেছেন তিনি।

সুযোগ নষ্ট করেননি কোহলি। আরও একটি ম্যাচে পাওয়ার প্লে-র মধ্যে নামতে হয়েছে তাঁকে। ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু করেছেন কোহলি। এই ছবি খুব একটা দেখা যায় না। কোহলি ইনিংসের শুরুতে বড় শট খুব একটা মারেন না। কিন্তু মঙ্গলবার রায়পুরে অনুশীলনে দেখা যাচ্ছিল, বড় শট মারছেন তিনি। ম্যাচেও সেটা দেখা গেল।

তবে যদি সার্বিক ইনিংসের বিচার করা হয়, তা হলে রাঁচীতে আরও নিখুঁত ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি। আউট হওয়ার আগে এক বারও সুযোগ দেননি। শতরানের পর একের পর এক বড় শট মেরেছেন। রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন। ১২০ বলে ১৩৫ রান করেছেন। কিন্তু রায়পুরে সেটা দেখা যায়নি। এই ইনিংসে সুযোগ দিয়েছেন কোহলি। দু’বার শট মারতে গিয়ে হাওয়ায় বল তুলেছেন। ভাগ্য ভাল সেগুলি ফিল্ডারের হাতে যায়নি। কয়েকটি বলে টাইমিং ঠিকমতো হয়নি। সেই টাইমিংয়ের ভুলেই ৯৩ বলে ১০২ রান করে আউট হতে হয়েছে তাঁকে।

নিখুঁত না হলেও এই শতরানে কোহলির ছাপ স্পষ্ট। সেই ফিটনেস। সেই একই ভাবে উইকেটের মধ্যে দৌড়। সাতটি চার ও দু’টি ছক্কা মেরেছেন কোহলি। অর্থাৎ, ১০২ রানের মধ্যে বাউন্ডারিতে এসেছে ৪০ রান। বাকি ৬২ রান দৌড়ে। তার মধ্যে ৪৫টি সিঙ্গল। ৩৭ বছর বয়সেও তিনি কতটা ফিট, সেটা বার বার দেখিয়ে দিচ্ছেন কোহলি।

রাঁচীতে ম্যাচের সেরা হওয়ার পর কোহলি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর কাছে মাঠের প্রস্তুতির থেকে মানসিক প্রস্তুতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক ভাবে প্রস্তুত তিনি। অর্থাৎ, সরাসরি বোর্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। কোচ গম্ভীর ও প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরও নির্দেশ দিয়েছেন, ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ খেলতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে রোহিত, কোহলিকে। প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছেন কোহলি। জানা গিয়েছে, বিজয় হজারে ট্রফি খেলতেও প্রথমে রাজি হননি কোহলি। কিন্তু পরে বোর্ডের অনুরোধে রাজি হয়েছেন। অন্তত দু’টি ম্যাচ খেলবেন তিনি।

আগের ম্যাচে কোহলির শতরানের পর সাজঘরে বসে হাততালি দিতে দেখা গিয়েছিল গম্ভীরকে। অপছন্দের ক্রিকেটারের শতরানের প্রশংসা করেছিলেন তিনি। কোহলি সাজঘরে ফেরার পর তাঁকে জড়িয়েও ধরেছিলেন কোচ। কিন্তু কোচকে উপেক্ষা করেছিলেন কোহলি। দলের জয়ের উল্লাসেও যোগ দেননি। তিনি নিজের মধ্যেই রয়েছেন। নিজের খেলা নিয়েই ভাবছেন। সেই পুরনো বিরাটকে আবার দেখা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.