সকাল থেকেই বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে। অনেক ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া মিলছিল না। হঠাৎ সেই সময়েই হাজির হলেন বাড়ির পরিচারিকা। তাঁর কাছেই জানতে চাওয়া হয় গৃহকর্তার ব্যাপারে। তিনি কোনও মন্তব্যই করতে রাজি হলেন না। চলে গেলেন পাশ কাটিয়ে। কিন্তু পাড়ায় গুঞ্জনের শেষ নেই! লোকমুখে এখন আলোচনার একটাই বিষয়— যাদবপুরের পড়ুয়ামৃত্যু। মঙ্গলবার সপ্তক কামিল্যাকে পুলিশ কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই চিত্রটা এমনই পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ৬ নম্বর পুরসভা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর মিলেছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বুধবার সপ্তককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সপ্তক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। তিনি এগরার বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তকের বাবা তাপস কামিল্যা স্বর্ণব্যবসায়ী। বাড়ির দরজায় তালা ঝুললেও তাপসের সোনার দোকানটি অবশ্য খোলা। ভিড়ও যথেষ্ট ছিল। তাপসকে সেখানে পাওয়া না গেলেও দোকানের কর্মচারী কমল পাল জানান, গত সোমবারই কলকাতা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার পৈতৃক বাড়িতে ফিরেছিলেন সপ্তক। তাঁর কথায়, ‘‘সপ্তক কামিল্যা গত পরশু (সোমবার) কলকাতা থেকে এগরার বাড়িতে ফিরেছিলেন। এর পর গত কাল (মঙ্গলবার) বিকেল ৫টা নাগাদ কলকাতার পুলিশের দল এগরা শহরে হানা দিয়ে সপ্তককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।’’
পাড়াতেও খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মঙ্গলবার সপ্তককে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাপসকে বাইরে দেখা যায়নি। পড়শিরা জানাচ্ছেন, পড়াশোনার সূত্রে দীর্ঘ দিন ধরেই কলকাতায় থাকেন সপ্তক। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতেন। দু-এক দিন থেকেই আবার ফিরে যেতেন। সুমন শেঠ নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘ছেলেটাকে ছোট থেকেই দেখছি। সত্যি ভাবতেই পারছি না!’’ পড়শিদেক একাংশের অনুমান, সম্ভবত ছেলের জন্যই কলকাতায় গিয়েছেন গৃহকর্তা এবং তাঁর স্ত্রী।
যাদবপুরকাণ্ডে বুধবার আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সপ্তক তাঁদের মধ্যেই এক জন। এ ছাড়াও রয়েছেন— জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ, পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর। আগেই গ্রেফতার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী, পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত। এই নিয়ে মোট ন’জন গ্রেফতার হয়েছেন পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায়। নতুন গ্রেফতার হওয়া ছ’জনকে বুধবারই আলিপুর আদালতের হাজির করানো হয়। বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
সপ্তকের মতো সুমন এবং অসিতও যাদবপুরের প্রাক্তনী। পুলিশ সূত্রে খবর, তিন প্রাক্তনী ঘটনার পর হস্টেল ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সকলেরই মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সপ্তকের ল্যাপটপটিও। পুলিশ আদালতেই তা জানিয়েছে। পরে আদালতের বাইরে বেরিয়ে আইনজীবী শুভাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগে যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের বয়ান খতিয়ে দেখার পর এই ছ’জনের নাম উঠে এসেছে। ঘটনায় এঁরা যুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এঁদের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে। এই ক’দিনে তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে। পুলিশ ভাল কাজ করছে। আশা করছি, যাঁরা দোষী, শীঘ্রই তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারব।’’