ডাক্তারদের দ্বিতীয় ‘১০’! নবান্ন নয়, নিশানা নিজাম! দাবি নয়, প্রশ্ন! হাতিয়ার এ বার ‘ধর্ষক ও খুনি’র মন্তব্য

আরজি কর-কাণ্ডে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা ১০ দফা দাবি জানিয়েছিলেন রাজ‍্য সরকারের কাছে। এ বার সিবিআইয়ের সামনে তাঁরা রাখলেন ১০টি প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলি উঠেছে আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের জমা দেওয়া চার্জশিটের প্রেক্ষিতে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’ ওই ১০ প্রশ্নের জবাব যত শীঘ্র সম্ভব জানাতে বলেছে সিবিআইকে।

১০ প্রশ্ন—

১। ময়নাতদন্তে নির্যাতিতার দেহে এক ধরনের সাদা তরল পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। পরে সেই তরল সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। সেই তরল পদার্থ কি পরীক্ষা করা হয়েছিল? সেটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল কি? সেই রিপোর্ট কোথায়? নির্যাতিতার শরীরের উপরিভাগে ধৃতের লালারসের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। চার্জশিটে এ সব বিষয়ের উল্লেখ নেই কেন?

২। ঘটনার দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ১৪ অগস্ট কেন সেই সব নমুনা কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হল?

৩। অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে ৯ অগস্ট গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কেন ১২ অগস্ট রক্তের দাগ লেগে থাকা জামাকাপড় তাঁর ব্যারাক থেকে আনা হল?

৪। এটা আন্দাজ করা যায় যে, ধৃতের শরীরে যে সব আঘাতের চিহ্ন রয়েছে তা নির্যাতিতার প্রতিরোধের ফলেই হয়েছে। নির্যাতিতার নখ থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল সেখানে কি ধৃতের টিস্যুর নমুনা ছিল? চার্জশিটে এ সবের উল্লেখ নেই কেন?

৫। ৯ অগস্ট রাত পৌনে ১১টায় সিজার লিস্ট তৈরি হয়। সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয় রাত সাড়ে ১১টায়। কিন্তু এফআইআর দায়ের করা হয় রাত পৌনে ১২টায়। এফআইআর দায়ের হওয়ার আগেই কী ভাবে গ্রেফতারি? তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

৬। চার্জশিট অনুযায়ী, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার রাত ৩টে ২০ মিনিটে আরজি করে প্রবেশ করেন। ট্রমা কেয়ার ভবনে যান ৩টে ৩৪ মিনিটে। সেখান থেকে ৩টে ৩৬ মিনিটে বার হয়ে আসেন। এর পর যান আপৎকালীন ভবনে (সময়ের উল্লেখ নেই)। এর পর তাঁকে আপৎকালীন ভবনের তিন তলায় চেস্ট মেডিসিন ওয়ার্ডে দেখা যায়। সময় ৪টে ৩ মিনিট। ৩টে ৩৬ মিনিট থেকে ৪টে ০৩— এই ২৭ মিনিট তিনি কোথায় ছিলেন? কী করছিলেন চার্জশিটে সেই কথার উল্লেখ নেই।

৭। ঘটনার কথা টালা থানায় জানানো হয়েছে? চার্জশিটে উল্লেখ নেই সেই কথারও।

৮। পুলিশ অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে তাঁর ব্লুটুথ ইয়ারফোনের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে। হাসপাতালের সিসিটিভিতে তাঁর যা চলাফেরা ধরা পড়েছে, চার্জশিটে তার বৃত্তান্ত দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৪টে ৩ মিনিটে সে চেস্ট ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছে তখন তাঁর গলায় ইয়ারফোনটি ছিল। ৪টে ৩২ মিনিটে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর গলায় ইয়ারফোনটি ছিল না। ৪টে ৩১ মিনিট নাগাদ তাঁকে সিসিটিভির সামনে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। সেই সময় কি তাঁর গলায় ইয়ারফোনটি ঝোলানো ছিল? চার্জশিটে এর স্পষ্ট উল্লেখ নেই।

৯। কলেজ কর্তৃপক্ষ এফআইআর দায়ের করলেন না কেন? নির্যাতিতার বাবা-মাকে কেন তা করতে হল?

১০। চার্জশিটে সে দিনের ঘটনাবলির সময়বৃত্তান্ত বিস্তারিত ভাবে দেওয়া রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার বাবা-মা ঘটনার দিন সওয়া ১২টা নাগাদ আরজি করে পৌঁছন। কিন্তু চার্জশিটে এটা বলা নেই যে, তাঁরা আসার পর কী হয়েছিল বা কেন তাঁরা তিন ঘণ্টা তাঁদের মেয়ের দেহ দেখতে পাননি?

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সোমবার শিয়ালদহ আদালতে চার্জ গঠন হয়। চার্জ গঠনের পর আদালত থেকে বেরিয়ে প্রিজ়ন ভ্যানে উঠে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করেছেন। তিনি এ-ও দাবি করেছেন যে, এই ঘটনায় তাঁকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে, যার নেপথ্যে রয়েছে সরকার। ধৃতের এই দাবির পরেই আবার আসরে নেমেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, কারা ফাঁসিয়েছেন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে? কেন ফাঁসানো হয়েছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। এর পরেই প্রশ্ন তুলেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.