রবিবার আলকারাজ়কে হারিয়ে ‘প্রতিশোধ’ চান জোকোভিচ, ঘাসের কোর্টের সম্রাট হতে চান স্পেনীয়

এক বছর পর আবার। আরও এক বার।

যে উইম্বলডনে তিনি সাতটি ট্রফি জিতেছেন, সেই প্রতিযোগিতা থেকেই তাঁকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। নেপথ্যে এক অদম্য খেলোয়াড়, যিনি হারতে শেখেননি। তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠে তিন বারই জয়। বিশ্বের এক নম্বরকেও ডরান না। মাত্র ২২ বছরে তা সম্ভব।

কার্লোস আলকারাজ়‌ বুঝিয়েছেন, তা সম্ভব। যে কারণেই রজার ফেডেরারের পর যে খেলোয়াড়কে ঘাসের কোর্টে খেলতে গোটা বিশ্ব ভয় পায়, সেই জোকোভিচকে পাঁচ সেটের অদম্য লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়েছিলেন গত বছর। বছর ঘুরে ফাইনালে সেই দুই খেলোয়াড়ই। জোকোভিচের সামনে ফেডেরারের আট ট্রফি ছোঁয়ার হাতছানি। নিজের গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ। তবে সবার আগে নিঃসন্দেহে যেটা কাজ করছে, তা হল প্রতিশোধের বাসনা। দুনিয়াকে দেখানো, বুড়ো হাড়ে জোর এখনও কমেনি।

উইম্বলডনের ফাইনালে উঠলেও আলকারাজ়‌ যে জোকোভিচকে হারিয়ে দেবেন, এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। গত বছর সেটাই করেছিলেন স্পেনের খেলোয়াড়। চার ঘণ্টা ৪২ মিনিটে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে জিতেছিলেন। ওপেন যুগে বিশ্বের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসাবে ২১ বা তার কম বয়সে একাধিক বার উইম্বলডন ফাইনালে ওঠার নজির গড়েছেন আলকারাজ়। গত মাসে ফরাসি ওপেন জিতে তরুণতম খেলোয়াড় হিসাবে টেনিসের তিন ধরনের কোর্টেই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের নজির গড়েছেন।

রবিবার আলকারাজ় জিততে পারলে বিশ্বের ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসাবে ফরাসি ওপেন এবং উইম্বলডন দু’টিই জেতার নজির গড়বেন। এই নজির রয়েছে রড লেভার, বিয়র্ন বর্গ, রাফায়েল নাদাল, রজার ফেডেরার এবং নোভাক জোকোভিচের। তবে একই বছরে সুরকি এবং ঘাসের কোর্টে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার প্রসঙ্গে আলকারাজ়‌ বলেছিলেন, “গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতাটাই কঠিন কাজ। সুরকি থেকে ঘাসের কোর্ট পুরোপুরি আলাদা। সম্পূর্ণ অন্য খেলা খেলতে হয়। আমি চেষ্টা করব। ছোট যে তালিকা রয়েছে, সেখানে নিজের নামও ঢোকানোর চেষ্টা করব। জানি খুব বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমি তৈরি।”

জোকোভিচ সরাসরি কিছু বলেননি। আলকারাজ়ের প্রশংসাই করেছেন। কিন্তু জয় ছাড়া তার মাথাতেও যে কিছু ঘুরছে না, এটা বোঝা গিয়েছে। উইম্বলডনে ফেডেরারের আট ট্রফি জেতার নজির রবিবার ছুঁতে চান। পাশাপাশি উইম্বলডনের ইতিহাসে প্রবীণতম হিসাবে ট্রফি জিততে চান।

বড় মঞ্চে আর এক বার আলকারাজ়‌ের সঙ্গে লড়াই উপভোগ করতে চলেছেন জোকোভিচ। বলেছেন, “গত বার পাঁচ সেটের লড়াইয়ে ও আমাকে হারিয়েছিল। এ বারও তার থেকে কম কিছু ভাবছি না। কোর্টে দারুণ একটা লড়াই হতে চলেছে। ম্যাচে যেমন দরকার তেমন খেলতে পারে। তাই নিজের সেরাটা না দিলে ওর মতো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে জেতা অসম্ভব।”

মুখোমুখি সাক্ষাতে জোকোভিচ এখনও ৩-২ এগিয়ে রয়েছেন। হাঁটুর চোট এত দ্রুত সারিয়ে তিনি যে ফাইনালে উঠে পড়বেন তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। দশম উইম্বলডন ফাইনালে ওঠার পথে মাত্র দু’টি সেট হারিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে জোকোভিচ বলেছেন, “নিজেকে নিয়ে প্রচুর সন্দেহ ছিল। প্রতিযোগিতার মাত্র আট দিন আগে লন্ডনে এসেছিলাম। জানতামই না এখানে খেলতে পারব কি না। ড্রয়ের আগের দিন পর্যন্ত সব রাস্তা খোলা রেখেছিলাম। অনুশীলনে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে খেলার পর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল যে খেলতে পারি।”

মানসিক ভাবে বিপক্ষের থেকে এগিয়ে থাকার কারণেই যে সাফল্য পেয়েছেন, এ কথা বার বার স্বীকার করেছেন জোকোভিচ। সে কারণেই ফেডেরার বা নাদাল থাকার সময়েও উত্থানে সমস্যা হয়নি। কিন্তু আগের বছর আলকারাজ়‌ের বিরুদ্ধে মানসিক যুদ্ধেই হেরেছিলেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আলকারাজ় একটুও ভয় পাননি জোকোভিচকে। তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বরের বিরুদ্ধে খেলতে নামলেও স্নায়ুর চাপে পড়েননি। সেটাই তাঁকে এগিয়ে রেখেছিল ফাইনালে।

তবে এ বার জোকোভিচকে আগের বারের থেকেও নিখুঁত লাগছে। আলকারাজ়ের তুলনায় ভাল খেলছেনও। সে কথাই মনে করিয়ে আলকারাজ় বলেছেন, “সবাই জোকোভিচকে চেনে। এতগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল খেলেছে। গত বার অনেক সমস্যায় ফেলেছিল। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”

জোকোভিচ আবার হৃত আসন ফিরে পান, নাকি আলকারাজ়‌ পাকাপাকি ভাবে ঘাসের কোর্টের নতুন রাজা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন, অপেক্ষা এখন সেটারই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.