তৃণমূলের হয়ে নথি বিকৃতি! সাসপেন্ডের সুপারিশ এসডিও, বিডিওকে, নির্বাচন বাতিল করল হাই কোর্ট

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীদের নথি বিকৃত করার মামলায় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও)-সহ তিন আধিকারিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করল কলকাতা হাই কোর্ট নিযুক্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটি। বৃহস্পতিবার ওই কমিটির সদস্যেরা আদালতে রিপোর্ট জমা দেন। সেখানেই তিন আধিকারিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে।

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র বিকৃত করার অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার দুই প্রার্থী। বিডিও-র বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র বিকৃত করার অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের কাশ্মীরা বিবি, ওমজা বিবির অভিযোগ ছিল, তাঁদের নথি বিকৃত করা হয়েছে। তার ফলেই স্ক্রুটিনি থেকে বাদ চলে যায় এই প্রার্থীদের নাম। বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি করেছিলেন তাঁরা।

মামলাটি বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে উঠেছিল। তিনি শুনানির পর এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। নথি সত্যিই বিকৃত করা হয়েছিল কি না, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তিনি খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার।

বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে। কমিটিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়। কমিটি তদন্ত শেষ করে বৃহস্পতিবার আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মামলাকারীদের অভিযোগ সত্যি। সংশ্লিষ্ট বিডিও, এসডিও এবং আরও এক আধিকারিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিটির রিপোর্টে।

কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসডিও এবং বিডিও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা তৃণমূল প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতাতে সাহায্য করেছেন। কমিটির তথ্যানুসন্ধানে খুশি আদালত।

এই মামলায় উলুবেড়িয়ার সংশ্লিষ্ট আসনটিতে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, উলুবেড়িয়ার বহিরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন শূন্য হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থীর এই আসনে লড়ার অধিকারই নেই। পাশাপাশি, আদালত জানিয়েছে, রাজ্যকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে আসনটিতে পুনর্নির্বাচনের দিন ঠিক করতে হবে।

কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আদালতের পর্যবেক্ষণ, উলুবেড়িয়ার এসডিও শমীককুমার ঘোষ, বিডিও নিলাদ্রীশেখর দে, জাতি শংসাপত্র বিভাগের অতিরিক্ত ইনস্পেক্টর কৃপাসিন্ধু সামইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত। উলুবেড়িয়ার সংশ্লিষ্ট আসনটি ওবিসি সংরক্ষিত। সিপিএম প্রার্থী কাশ্মিরা ওবিসি সম্প্রদায়ের। কিন্তু তদন্তের সময় তৃণমূল প্রার্থী লুৎফানেসা বেগম স্বীকার করে নেন, ওবিসি সম্প্রদায়ের নন। অথচ অসত্য তথ্য দিয়ে তাঁকে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, তৃণমূল প্রার্থীর ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাই নেই। কিন্তু তথ্য বিকৃত করে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। সমগ্র প্রক্রিয়ায় সরকারি আধিকারিকেরা যুক্ত।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে। তাঁদের সাসপেন্ড করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.