অম্বেডকর-মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের মাঝে এ বার কংগ্রেসকে পাল্টা বিঁধলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যসভায় তাঁর বক্তৃতাকে কংগ্রেস বিকৃত করে দেখাচ্ছে বলে দাবি শাহের। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সংবিধান-বিতর্কে বক্তৃতা করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সময় বাবাসাহেব অম্বেডকরের প্রসঙ্গ উঠে আসে শাহের বক্তৃতায়, যা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। ওই মন্তব্যকে ঘিরে বুধবার সংসদের উভয় কক্ষেই হইহট্টগোল শুরু হয়ে যায়। অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায় রাজ্যসভা এবং লোকসভায়। ওই মন্তব্যের জন্য শাহকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলে কংগ্রেস। সরব হয় তৃণমূলও। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, অম্বেডকরের বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করে গণতন্ত্রের মন্দিরকে অপমান করেছেন শাহ।
এই বিতর্কের আবহে বুধবার বিকেলে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে বসেন শাহ। যে কংগ্রেস তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে, সেই কংগ্রেসকেই পাল্টা নিশানা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতাকে বিকৃত করে দেখানো হয়েছে বলে দাবি করলেন। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের সময়ে কংগ্রেস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তাঁর বক্তৃতাকে ‘এডিট’ করেছে বলে দাবি শাহের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতাও অতীতে কংগ্রেস বিকৃত করেছে বলে অভিযোগ শাহের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অতীতে জনসঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যা থেকে পরে বিজেপি রূপ পায়। সে কথাও উঠে আসে শাহের বক্তব্যে। তাঁর দাবি, এই দু’টি দল সব সময়েই অম্বেডকরের দেখানো পথে চলার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, “আমি যে দলের সদস্য, সেই দল কখনও অম্বেডকরজির অপমান করতে পারে না।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি শাসনকালে সব সময়ে অম্বেডকরের আদর্শ প্রচারের চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সংবিধান-বিতর্কে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে শাহ বলেন, ‘‘এখন এক ফ্যাশন হয়েছে— অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর। এত বার যদি ভগবানের নাম নিতেন তবে সাত জন্ম স্বর্গবাস হত।’’ তার পর শাহ বলেন, ‘‘১০০ বার অম্বেডকরের নাম নেওয়া হয়, কিন্তু আমি বলতে চাই তাঁর প্রতি আপনাদের অনুভূতি কী?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে অম্বেডকরের অনেক মতপার্থক্য ছিল। সেই কারণে নেহরুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।’’
এর পরে বুধবার সকালে সংসদের বাইরে কংগ্রেস সাংসদেরা অম্বেডকরের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ‘জয় ভীম’ স্লোগান তোলেন তাঁরা। বিক্ষোভের আঁচ ছড়ায় সংসদের ভিতরেও। হট্টগোল শুরু করেন কংগ্রেস সাংসদেরা। আনা হয় মুলতুবি প্রস্তাব। ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের জন্য অবিলম্বে শাহকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন তাঁরা। শাহের পদত্যাগের দাবিও তোলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা কংগ্রেসে সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে।