বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন সন্দেশখালি-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখ। ঠিক তার পরের দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় যে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে তা আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। হলও তাই। সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আরামবাগের সভা থেকে তৃণমূলকে আক্রমণ শানালেন মোদী। শুধু তাই নয়, ‘দিদি’ বলে উল্লেখ করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেছেন মোদী। একই সঙ্গে গত কয়েক বছরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ নিয়েও সরব হলেন মোদী। বুঝিয়ে দিলেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে তৃণমূলকে আক্রমণের জন্য সন্দেশখালি এবং দুর্নীতিকেই ইস্যু করতে চাইছে বিজেপি। রাজ্যে প্রচারের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী বিজেপির রাজ্য নেতাদেরও পথনির্দেশ করে দিলেন।
শুধু বাংলা নয়, বৃহস্পতিবার আরামবাগ দিয়েই লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্ব শুরু করলেন মোদী। আর সেই প্রচারে বিরোধীদের আক্রমণের পাশাপাশি গত দশ বছরে তাঁর সরকার কী কী কাজ করেছে সেই সাফল্যের খতিয়ানও যে তিনি তুলে ধরতে চান তা বুঝিয়েছেন মোদী। বৃহস্পতিবার আরামবাগের কালীপুর মাঠে দলীয় সভার আগে একটি সরকারি কর্মসূচিতেও যোগ দেন মোদী। সেখানে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। সেই প্রসঙ্গ দিয়েই বক্তৃতা শুরু করেন। পৌনে ৪টে থেকে সওয়া ৪টে পর্যন্ত আধ ঘণ্টার বক্তৃতার শুরুর দিকে মোদী রেল-সহ বিভিন্ন খাতে বাংলার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র কী কী করেছে তা বলেন। তবে বেশি সময়টাই ছিল তৃণমূলকে আক্রমণ।
সভার শুরুতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তোলেন। আর সেই সুরেই মোদী বক্তৃতা শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চলে যান উত্তর ২৪ পরগনার ওই উত্তপ্ত এলাকা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার অবস্থা আজ গোটা দেশ দেখছে। মা, মাটি, মানুষ— এই ঢোল পেটায় যারা, সেই তৃণমূল সন্দেশখালির বোনদের সঙ্গে যা করেছে, তা দেখে গোটা দেশ দুঃখিত।’’ আরামবাগ লোকসভা এলাকার মধ্যেই খানাকুলে জন্ম রামমোহন রায়ের। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘যা হচ্ছে সন্দেশখালিতে, তা দেখে রামমোহন রায়ের আত্মা কাঁদছে। যাঁর জন্ম হয়েছিল এই খানাকুলে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতা সন্দেশখালিতে দুঃসাহসের সব সীমা পার করেছে। ওখানকার মহিলারা মমতা দিদির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। বিজেপির নেতারা রাতদিন মা-বোনদের সম্মানের জন্য লড়াই করেছেন। লাঠির আঘাত সয়েছেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার বাংলার পুলিশ আপনাদের সামনে মাথা নত করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।’’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, শিক্ষক নিয়োগ থেকে পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘সব জায়গাতেই দুর্নীতি করেছে তৃণমূল। গরিবদের রেশনে বণ্টন থেকে সীমান্ত দিয়ে পশু পাচার, সবেতেই দুর্নীতি করেছে।’’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকার প্রসঙ্গেও তোলেন মোদী। জনতার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘এত টাকা কখনও দেখেছেন? সিনেমাতেও দেখেছেন?’’ রাজ্যের জন্য রানিগঞ্জে কয়লাখনির কাজ আটকে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্য দলের নাম সে ভাবে না নিলেও বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকেও আক্রমণ শানিয়েছেন মোদী। সে ক্ষেত্রেও সন্দেশখালিই ছিল মোদীর অভিযোগের কেন্দ্রে। আরামবাগের সভা থেকে বলেন, ‘‘পটনা, বেঙ্গালুরু, আর কোথায় কোথায় এঁরা একসঙ্গে বসে বৈঠক করেন। অথচ কংগ্রেস এখানকার মুখ্যমন্ত্রীর থেকে জবাব চাওয়ার সাহস করেননি। সন্দেশখালির এই বোনদের মতামত এক বারও দেখা হয়নি।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘কংগ্রেস যা বলেছে, শুনলে চমকে যাবেন। কংগ্রেসের সভাপতি বলেছেন, বাংলায় এ সব চলতেই থাকে।’’
বাংলাকে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল। কলকাতায় ধর্নায় বসেছিলেন মমতা। তার আগে দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘দুর্নীতিতে জর্জরিত বলেই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের বিরুদ্ধে ধর্না হয় এখানে। মোদী এ সবে ভয় পান না। আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে গ্যারান্টি দিয়েছি।’’ যাঁরা গরিবকে লুটেছেন, তাঁদের রাজ্য থেকে হটানোর ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লুটনেওয়ালে কো লওটানা হোগা।’’