প্রতিদিনের মতো আজ, মঙ্গলবারও সকালে নিউটাউন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে আসেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সেখানে যথারীতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ, ধেয়ে আসে নানা প্রশ্ন। কখনও গার্ডেনরিচ, কখনও বেআইনি নির্মাণ, কখনও নির্বাচন কমিশনের কার্যবিধি, কখনও ইলেকটোরাল বন্ড। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সবকিছুরই উত্তর দিয়ে যান তিনি।
গার্ডেনরিচ
পোস্তা, মাঝেরহাট সেতু-বিভ্রাটের স্মৃতি উসকে এবার গার্ডেনরিচে মৃত্যুমিছিল। মাঝরাতে হুড়মুড়িয়ে ভাঙল বেআইনি বহুতল। ৯ জনের মৃত্যু। ১২জন আহত। এ প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, এ ঘটনায় রাজনৈতিক নেতানেত্রীরাও যুক্ত আছেন। সরকারি কর্মীরা যাঁরা টাকাপয়সা নিয়ে বেআইনি নির্মাণকে অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছেন তাঁরাও যুক্ত। পুলিস প্রশাসন নেতা প্রোমোটার সকলে মিলেমিশে আছে। এখন কোনও বাধা ছাড়াই এসব হচ্ছে। মেয়র ওখানে দেখতে গিয়েছেন। ওখানকার কাউন্সিলর বলছেন, আমি কিছু জানি না। একটা কাউন্সিলর তাঁর ওয়ার্ডে এত বড় বিল্ডিং হচ্ছে, তিনি জানেন না! দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। কারণ এর পেছনে টাকাপয়সা আছে। যত খাল বিল নালা আছে, সব বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, ইকো পার্কের পুকুরটা না বুজিয়ে দেয়!
বেআইনি বহুতল
পুকুর বুজিয়ে বেআইনি বহুতল উঠছে। ৪ ফুট রাস্তায় ৫ তলা বাড়ি! অভিযোগ করলেই খুনের হুমকি, বিস্ফোরক অভিযোগ স্থানীয়দের। এসব প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ জানান, আগেও এরকম হয়েছে। কারণ, এর পিছনে অনেক বড় শক্তি আছে। টাকাপয়সার ব্যাপার আছে। না হলে ওরকম হয় কী করে? বস্তির মাঝে যেখানেই জায়গা পেয়েছে, সেখানেই পিলার তুলে বাড়ি করে দিচ্ছে! কী করে সম্ভব হয় এটা? এখন তো ওই বাড়িতে লোক ছিল না। যদি কমপ্লিট হয়ে যেত এবং প্রচুর মানুষ বাস করা শুরু করতেন, তাহলে কত বড় বিপর্যয় হত? উপর-নীচ মিলিয়ে কতজনের প্রাণ যেত? কত এই ধরনের বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে! আর অপেক্ষার প্রহর গুনছে, কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। শুনে চিন্তা হয়, কী চলছে এখানে! এখন বলছে, খোঁজখবর নিয়ে এই ধরনের কাজ বন্ধ করতে। কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে ছবি তুলবেন, মেয়র গিয়ে আশ্বাস দেবেন আর প্যানেলে গিয়ে ওঁদের লোকেরা বলবেন, মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। গরম-গরম কথা বলবেন, ক্ষতিপূরণ দেবেন আর সব বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষগুলো কি বাঁচবে না?
গার্ডেনরিচকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী
গার্ডেনরিচকাণ্ডে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাউন্সিলরকে আড়াল করে দায় এড়ানোর চেষ্টায় মেয়র? এ প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, সবাই তো আড়াল করার চেষ্টা করছে। কাউন্সিলর ডাকাতির কেসে আগে জেল খেটেছে। এমন মহান লোকেদের তৃণমূল টিকিট দিয়ে কাউন্সিলর করেছে। এমন ডাকাত লোক কী করে কাউন্সিলর হতে পারে? এদের গায়ে কে হাত দেবে? শাহজাহানের ক্ষেত্রে আমরা বলেছিলাম, পাড়ায়-পাড়ায় শাহজাহান তৈরি করেছেন দিদিমণি। এখন তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সকলকে।
নির্বাচন কমিশন
সরানো হল রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে। যুক্ত থাকতে পারবেন না ভোটের কোনও কাজে। এ বিষয়ে দিলীপ বলেন, নির্বাচন কমিশন যাঁদের সরানো দরকার মনে করছে, তাঁদের সরাচ্ছে। অন্য ছ’টা স্টেটের মধ্যে চিফ সেক্রেটারিদের সরিয়েছে। এগুলির মধ্যে বিজেপিশাসিত সরকার আছে। এই প্রক্রিয়া নির্বাচনের অঙ্গ। আগের ভোট এবং সেই অফিসারদের রেকর্ড দেখে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, সুচারুরূপে নির্বাচন করার জন্য কী প্রয়োজন।
নির্বাচনী বন্ড ও তৃণমূল
যারা একটি ডেয়ারি কিনেছিল সেই ডেয়ারি কোম্পানি ৬৭৩ কোটি টাকা তৃণমূল কংগ্রেসকে দিয়েছে। আর একটি কোম্পানিকেও দেখুন, যত জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিটিং, সেখানে তাদের মালিক বসে আছেন। এটা ঠিক, দেশের একটি ব্যবস্থা ছিল, তার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলই টাকা পেয়েছে। এটাকে বেআইনি বলা যাবে না। তবে এখন সুপ্রিম কোর্টের মনে হচ্ছে, (ব্যাপারটা) বিধিবদ্ধভাবে হচ্ছে না। তাই তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। স্টেট ব্যাংকে বলেছেন। তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে। তারপর আদালত যা বলবে তাই হবে।