ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিট না পেয়েই ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছেন বিদায়ী সাংসদ অর্জুন সিংহ। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার সকালেই তাঁর দফতর থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরানো হয়েছে। আর দুপুরে দেখা গেল, সেই জায়গা দখল করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সই করা ছবি। তবে অর্জুন-ঘনিষ্ঠ অনেকে জানিয়েছেন, ওই ছবিটি আসলে একটি শুভেচ্ছাবার্তা। সাংসদকে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা হলে কি অর্জুন পদ্মশিবিরের যোগ দিচ্ছেন! এই জল্পনার মাঝেই তাঁর এবং বঙ্গ বিজেপির ভাবনা স্পষ্ট করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানান, দিল্লি ঠিক করবে।
তিনি যে আর তৃণমূলে থাকতে চান না, তা স্পষ্ট ভাবে না বললেও হাবেভাবে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্জুন। মমতা, অভিষেকের ছবি সরিয়ে সেখানে মোদীর স্বাক্ষর করা শুভেচ্ছাবার্তার ছবি আসায় অর্জুনের বিজেপি যোগের জল্পনা আরও বৃদ্ধি পেল। ব্যারাকপুরের সাংসদকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তবে কি তৃণমূল ছাড়ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দলে এখন আমি অবাঞ্ছিত (আনওয়ান্টেড)। আমার কোনও চাহিদা ছিল না। কিন্তু আমার দেড় বছর নষ্ট করা হল।’’
তৃণমূল ছাড়লে আবার বিজেপিতে যেতে পারেন অর্জুন— এমন দাবি করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠেরাও। অর্জুনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিনের মধ্যেই জানতে পারবেন আমি আছি, না নেই। আমার ‘ডেথ ওয়ারেন্ট’-এ সই করে দেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু বিজেপি তাঁকে নেবে কি? সেই নিয়ে মঙ্গলবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিতে কাকে নেওয়া হবে আর কাকে নেওয়া হবে না, তার সিদ্ধান্ত আমি নিই না। আমি শুধু আমার মতামত জানাতে পারি। সিদ্ধান্ত দিল্লিতে হবে।’’
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন। বিজেপির টিকিটে জিতেই ব্যারাকপুর থেকে সাংসদ হন। কিন্তু ২০২২ সালে আবারও তৃণমূলে ফিরে আসেন। অর্জুনের দাবি, লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে টিকিট দেওয়া হবে বলেই তাঁকে তৃণমূলে আনা হয়েছিল। টিকিট না পেয়ে বিদায়ী সাংসদ জানালেন, তৃণমূলে আসা তাঁর ভুল হয়েছে। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত কথা নিয়ে আমি কী বলব।’’
তার পরই বিরোধী দলনেতা যোগ করেন, ‘‘সে দিনও (অর্জুনের দল ছাড়ার দিন) আমি বলেছিলাম ভুল করছেন। যাওয়ার আগেও আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে ওঁকে (অর্জুন) আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। রাজনীতিতে থাকতে গেলে তো এমন মনোমালিন্য হয়ই। সব সংসারেই হয়।’’
তবে আবারও অর্জুনকে দলে নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে বলতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি আবারও বলছি দলীয় নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্তই নেবেন, তা আমাদের মতো লক্ষ লক্ষ কর্মীই কার্যকর করবে। কারণ এই নির্বাচন কোনও ব্যক্তি বিশেষকে সাংসদ করার নয়। এই নির্বাচন নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী করার নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোট হবে নরেন্দ্র মোদীর নামে।’’