উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। চণ্ডীগড় থেকে ডিব্রুগড়গামী ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের অন্তত ১০-১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যউর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আড়াইটে নাগাদ গোন্ডা ও মনকাপুরের মাঝে জিলাহী স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রেনের একটি বাতানুকূল কামরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পঙ্কজ সিংহ বলেন, ‘‘গোন্ডার কাছে মোতিগঞ্জ এবং জিলাহির মাঝখানে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা তদন্তসাপেক্ষ। আপাতত উদ্ধারকাজ চলছে। হতাহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে কিছু ক্ষণ পর বলা সম্ভব হবে। উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি। উদ্ধার করে আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকা বিকট শব্দ শুনতে পান যাত্রীরা। পর ক্ষণেই দুর্ঘটনা। বেলাইন হয়ে যায় একের পর এক কামরা। একাধিক বাতানুকূল কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলের যে ছবি আসতে শুরু করেছে, তা ভয়াবহ। একাধিক প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। দুর্ঘটনার পর হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা ট্রেন থেকে বেরিয়ে আসেন।
কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে উদ্ধারকারী দল। রেল দুর্ঘটনায় আটকে পড়া যাত্রীদের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক জনকে ইতিমধ্যেই উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি অবিরাম যোগাযোগ রাখছেন বলে এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিনের দুর্ঘটনার পর বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তিত হয়েছে।
১২৫৫৭ সপ্তক্রান্তি এক্সপ্রেস, ১২৫৫৩ সহরসা-নয়া দিল্লি বৈশালী এক্সপ্রেস, ১৩০১৯ হাওড়া-কাঠগোদাম বাঘ এক্সপ্রেস, ১৫২৭৩ রক্সৌল-আনন্দ বিহার সত্যাগ্রহ এক্সপ্রেস, ১২৫৬৫ দ্বারভাঙা-নয়া দিল্লি বিহার সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস, ১২৫৫৫ গোরক্ষপুর-ভাতিন্ডা গোরখধাম এক্সপ্রেস, ১৫৭০৭ কাটিহার-অমৃতসর আম্রপালী এক্সপ্রেস, ১৪৬৭৩ জয়নগর-অমৃতসর শহিদ এক্সপ্রেস, ৫০৯৪ গোন্ডা-গোরক্ষপুর প্যাসেঞ্জার ও ৫০৩১ গোন্ডা-গোরক্ষপুর প্যাসেঞ্জারের যাত্রাপথ বদল হয়েছে।
আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে গত ১৭ জুন ডাউন কাঞ্জনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। সেই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের রেল দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার দুপুরের এই রেল দুর্ঘটনার পর আহত যাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে কংগ্রেস।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি। একইসঙ্গে রেল ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডলে মমতা লিখেছেন, “রেল কী করছে? কেন্দ্র কী করছে? যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। কবে এটা বুঝবে কেন্দ্র?”
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি দুষতে শুরু করেছেন রেল মন্ত্রককে। গত ১০ বছরে ভারতীয় রেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে গিয়েছে বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।