ধানবাদ অগ্নিকাণ্ড: নিজে ঝলসে গিয়েও সন্তানকে বাঁচানোর আকুতি, মেয়েকে বুকে জড়িয়ে অগ্নিদগ্ধ মা

আগুনে ঝলসে গিয়েছেন মা। সন্তানকে বাঁচাতে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। আগুনে নিজে পুড়ে গিয়েছেন, কিন্তু সন্তানের গায়ে যাতে সেই আগুনের আঁচ না লাগে তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। ঘরে ঢুকেই এই দৃশ্য দেখে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন উদ্ধারকারীরা। ঝলসে যাওয়া মহিলার কোলে তখনও বাচ্চা মেয়েটির প্রাণ ছিল। উদ্ধারকারীদের দেখে হাত নাড়িয়ে বাঁচানোর আর্তি জানিয়েছিলেন তিনি। পুড়ে যাওয়া মায়ের কোল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মারা গিয়েছে মেয়েটি।

মঙ্গলবার ধানবাদের শক্তিমন্দির এলাকার একটি বহুতলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেখানকার বাসিন্দা সুবোধলাল শ্রীবাস্তবের মেয়ে স্বাতীর বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। বহুতলের দ্বিতীয় তলের বাসিন্দা পঙ্কজ আগরওয়ালের ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় তলে সুবোধের ফ্ল্যাটেও। তখন ফ্ল্যাটে তখন ছিলেন স্বাতীর মা, মাসি, দাদু, ঠাকুমা-সহ ১৪ জন। আগুন লাগার খবর পেয়ে তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার মধ্যে আগুনের শিখা দোতলা ও তিনতলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সিঁড়ি দিয়ে একটু নামার পরই আগুন এবং ধোঁয়া দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। আর তারপরই আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় সকলের।

ওই ১৪ জনই এসেছিলেন সুধীরলাল শ্রীবাস্তবের মেয়ের বিয়েতে। ওই আবাসন থেকে একটু দূরে হোটেলে চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান।সুধীরলালের আত্মীয় পরিজনরা, যাঁরা গ্রাম থেকে এসেছিলেন তাঁরা তৈরি হচ্ছিলেন বিয়ে বাড়ি যাবেন বলে। তখনই আগুন লাগে। প্রদীপের আগুন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পর্দায়। পর্দা থেকে রান্নাঘর। রান্নাঘরে সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত ফ্ল্যাট মালিক অনুপ আগরওয়াল বলেছেন, “অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। থাকলে এতগুলো জীবন যেত না।”

পরিজন হারানো শোক বুকে চেপে রাতেই মেয়ের বিয়ে সেরে ফেলেন সুধীরলাল। বিয়ে বাড়িতে আসা আত্মীয় পরিজনদের এমনকী, মেয়ের শ্বশুরবাড়ি লোকজনকেও এই দুর্ঘটনার কথা তিনি জানতে দেননি। কোনও মতে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠান। সবমিলিয়ে মুহূর্তে আনন্দের পরিবেশ বদলে যায় শোকের আবহে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.