রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই পোয়াবারো দুষ্ট চক্রের। মৃতের পরিবারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ক্ষতিপূরণের নামে বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের কাজ। এরকমই কিছু দুষ্ট চক্রের অত্যাচারে রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রামপুরহাট শাখা। তাদের দাবি, অবিলম্বে দুষ্ট চক্রের মাথাদের গ্রেফতার করতে হবে। চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করেছেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ধীমান মিত্র।
জানা গিয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বর এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় বীরভূমের রামপুরহাট ভাঁড়শালা মোড়ের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। দিন কয়েক আগে ওই নার্সিংহোমে এক ব্যক্তি কিডনিতে পাথর নিয়ে ভর্তি হন। চিকিৎসক সাদ্দাকাস আলি তার অস্ত্রপচার করে সুস্থভাবে ছুটি দিয়ে দেন। সেই সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেন। ২২ সেপ্টেম্বর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে তড়িঘড়ি ভাঁড়শালা মোড়ের একটি নার্সিংহোমের ভর্তি করা হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এরপরেই পরিবারের সদস্য এবং কিছু লোক নার্সিংহোমে চিকিৎসককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। তাদের দাবি, চিকিৎসার ভুলেই মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, এরপরেই চিকিৎসককে হুমকি দিয়ে ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। এরই প্রতিবাদে সোমবার চিকিৎসকরা মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হন।
চিকিৎসক সাদ্দাকাস আলি বলেন, “ঘটনার দিন সাতেক আগে রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার হাইসুগার ছিল। ছুটি দেওয়ার সময় তার পরিবারকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়মকানুন না মেনে রোগী টোটো চালিয়েছে। ইচ্ছে মতো খাওয়াদাওয়া করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ভিতরে ইনফেকশন হয়ে যায়। ঘটনার দিন আমরা রোগীকে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমের
আইসিসিইউ-এ রেখে বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। এরপর থেকে কিছু লোক রোগীর আত্মীয় সেজে এসে আমাকে রাস্তায় পেলে খুন করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। আমি তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাদের দাবি মেনে নেওয়ায় মুক্তি মেলে। তবে আমি কোনো টাকা দিইনি। বাধ্য হয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি”।
চিকিৎসক স্বরূপ সাহা বলেন, “কিছু মানুষ কারণে অকারণে চিকিৎসকদের উপর চড়াও হচ্ছে। এতে আমরা অসহায় বোধ করছি। তাই আমরা মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে এসেছিলাম। তাকে একটি স্মারকলিপি জমা দিলাম। এরপর আমরা সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব”।
চিকিৎসক সংগঠনের রামপুরহাট শাখার সভাপতি, হাঁসন কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনো চিকিৎসকই চায় না রোগীর মৃত্যু হোক। সব মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হলেই একটি চক্র মৃতের পরিবারের লোকজনদের নিয়ে চিকিৎসককে ঘিরে হুমকি দিচ্ছে। মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসকরা। সেই কারণেই মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি আমাদের সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন”।