রাজ্যের থেকে ১৮৫২ কোটি টাকা পায় দিল্লি! বকেয়া মেটাতে নবান্নকে চাপ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

রাজনৈতিক ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, এমন সময়েই কেন্দ্রীয় বাহিনীর বকেয়া টাকা চেয়ে রাজ্যের উপর চাপ বাড়াল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

লিখিত বার্তায় মন্ত্রক জানিয়েছে, বকেয়া থাকায় মূল অর্থের উপর জরিমানা ধার্য হয়েছে। ফলে এখন প্রায় ১৮৫২ কোটি টাকা মেটানোর কথা জানানো হয়েছে। সরকারি ভাবে এ নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও, স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রের কাছে বিপুল অর্থ বকেয়া রয়েছে রাজ্যের। সেই অর্থ তারা দীর্ঘদিন ধরেই আটকে রেখেছে। সেই দিক থেকে মন্ত্রকের চাওয়া অর্থের পরিমাণ নেহাতই অল্প।

নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা-সহ একাধিক কারণে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন হয়ে থাকে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাহিনী বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাজ্যের কাছে দাবি করে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কাছে যে চিঠি মন্ত্রক পাঠিয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে, গত বছর ৩০ জুন পর্যন্ত এই খাতে রাজ্যের কাছে বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০৬ কোটি টাকা। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও বকেয়া হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। মন্ত্রকের নিয়ম অনুযায়ী, এই খাতে ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ মিটিয়ে না দিলে ২.৫% হারে জরিমানা করা হয়। তাতে এ পর্যন্ত বাড়তি বোঝা চেপেছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে প্রায় ১৮৫২ কোটি টাকা মেটাতে হবে রাজ্যকে।

রাজ্য প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য নিজে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সাধারণত চায় না। নির্বাচন থাকলে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে আসে। এ রাজ্যে গত কয়েকটি নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক বাহিনী পাঠানো হয়েছিল। ফলে যে কর্তৃপক্ষ বাহিনী পাঠানোর সুপারিশ করেন, তাদেরই খরচের বিষয়টা দেখা দরকার। তা রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। এক কর্তার কথায়, “বাহিনী তো রাজ্য চায়নি। কারও না কারও সুপারিশে তা এসেছে। রাজ্যের এই অবস্থান অনেক বছর আগেকার। কেন্দ্রের থেকে এমন চিঠি প্রায়ই আসে রাজ্যের কাছে। অন্য দিকে দেখলে, কেন্দ্রের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা রাজ্যের। তা পাওয়া যাচ্ছে না। সেই বিষয়টাও নজরে রাখা জরুরি।”

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ বরাবর করে এসেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এমনকি, বিএসএফ বা সিআরপিএফ-কেও একই উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ তোলে তারা। বুধবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। সেই দিক থেকে বকেয়া অর্থ চেয়ে রাজ্যের উপর ‘চাপ’ বাড়ানোকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.