কালীপুজোর আগের রাত থেকেই শুরু হবে তোড়জোড়। ঘরে, বারান্দায়, সদর দরজায় সারি সারি মোমবাতি দিয়ে আলোর উৎসবে মাতবে বাঙালি। একটা সময়ে কালীপুজো বা দীপাবলিতে নানা রঙের মোমবাতি বা প্রদীপের টিমটিমে আলোতেই ঘরে বাতি দেওয়ার চল ছিল। এখন সময় বদলেছে। বাঙালি-অবাঙালি সংস্কৃতির মেলবন্ধনও ঘটেছে। ইদানীং দীপাবলিতে বাঙালিরাও রঙ্গোলিতে ঘর সাজান। কয়েক বছর আগে অবধিও ঝোলা তারে ছোট ছোট টুনি বাল্বই বেশি বিক্রি হত। এখন সেখানে এলইডি আলোর ছড়াছড়ি। তারাবাতি, এলইডি লণ্ঠন, হ্যারিকেন থেকে শুরু করে ঝালর, শ্যান্ডেলিয়ার ইত্যাদির পাশাপাশি বাঙালির ঘরে জায়গা করে নিয়েছে লেজ়ার আলোও।
দীপাবলিতে যদি হরেক রকম আলোতে ঘর সাজাতে চান, তা হলে কলকাতার কয়েকটি জায়গায় ঢুঁ মারতেই হবে। সস্তা হোক বা দামি, শহরের নানা প্রান্তের আলোর ঠিকানা জেনে নিন।
চাঁদনি মার্কেট
ছোট ছোট নানা রঙের টুনি লাইট কিনতে হলে চাঁদনি মার্কেটে একবার ঘুরে আসতেই পারেন। দোকানে দোকানে ঝুলতে দেখবেন বাহারি এলইডি বা রাইস বাতির মালা। শেষ কয়েক বছরে কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকে বিভিন্ন নামে সেই সব আলো আসতে শুরু করত কলকাতার বিভিন্ন বাজারে। তার মধ্যে চাইনিজ় বাতির সেরা ঠিকানাই হল চাঁদনি বাজার। দাম খানিকটা বেড়েছে ইতিমধ্যেই। গত বছর যে রাইস আলো ২৫ টাকায় বিকিয়েছে এ বছর তার কেনা দাম পড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, রাইস আলো বেশি দিন ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। আবার দাম চড়িয়ে রাখলে কিনতে চান না খদ্দেররা। ৮০ ফুটের এলইডি আলোর ফিতে ১৩০-১৪০ টাকায় পেয়ে যাবেন। যদি বিভিন্ন নকশার আলো চান, তা হলে দাম পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। ডিস্কো লাইট, ঘুরন্ত ফ্লাশ বাল্ব, ইউএফও, পদ্মফুলের মতো আলোর সঙ্গে রয়েছে এলইডি-র প্রদীপ, মোমবাতিও।
হাতিবাগান বাজার
শ্যামবাজার মোড় থেকে হাতিবাগানের দিকে যেতে রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দোকানের মাঝে নজর পড়বে দীপাবলির বাতির আয়োজন। বিভিন্ন রকম আকার, নকশার পাথর বসানো মাটির প্রদীপ পাবেন। কোনওটা সলতে দিয়ে জ্বালাতে হয়, কোনওটায় আবার এলইডি আলো। ৫০ টাকা ডজনে পেয়ে যাবেন। আর বেশি কারুকাজ করা বড়সড় প্রদীপ কিনতে হলে তার দাম বেশিই পড়বে। কেউ হাঁকছেন ৬০ টাকা, কেউ আরও বেশি। এলইডি আলো দেওয়া মোমবাতিও বিকোচ্ছে দেদার। ছোট টুনি লাইট, লণ্ঠন চাইলেও পাবেন।
এজ়রা স্ট্রিট
এজ়রা স্ট্রিটে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ঝলমলে আলোর পাশাপাশি দীপাবলিতে অন্দরসজ্জার নানা জিনিসও বিক্রি হয়। কলকাতার বহু পুরনো আলোর ঠিকানা এজ়রা স্ট্রিটের নামই ‘লাইট স্ট্রিট’। টুনি লাইটের পাশাপাশি ফেয়ারি লাইট, লণ্ঠন, পদ্মফুল বাতি, এলইডি আলো দেওয়া প্রদীপের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ফুল, চকোলেট বোমা, তারা— বিভিন্ন আকারের টুনি লাইটের হরেক রকম সম্ভার মিলবে এই বাজারে। এ ছাড়াও পাবেন ডিস্কো লাইট, নানা ধরনের ফানুস।
এজ়রা স্ট্রিটের ঝাড়বাতি গলিতে এলইডি আলো দেওয়া নানা রকম ঝাড়বাতি বিক্রি হচ্ছে। ফুল, ল্যাম্পের আকারের নানা রকম সিলিং লাইটের দাম ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। বড় ঝাড়বাতির দাম শুরু হচ্ছে ১০০০, ১২০০ টাকা থেকে। নকশার বহর যত বাড়বে ততই দাম চড়বে। ক্রিস্টালের মুভিং ঝাড়বাতির দাম পড়বে ১৬০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন রকম ছবি দেওয়া ছোট সিলিং লাইটের দাম পড়বে ৪০০-৪৫০ টাকা।
গড়িয়াহাট বাজার
দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ি হলে এই বাজারে ঢুঁ মারতে পারেন। ফুটপাথে সারি সারি দোকানে আলোর পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। বিভিন্ন ধরনের টুনি, স্ট্রিপ লাইট পেয়ে যাবেন এখানে। এলইডি আলো দেওয়া বড় বড় প্রদীপদানি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে হরেক কায়দার মোমবাতি নজর কাড়বে আপনার। নানা ধরনের এলইডি আলো বসানো লণ্ঠনও পাবেন। তারা, চাঁদ ও বিভিন্ন নকশার আলো বসানো লম্বা ফিতেও বিক্রি হচ্ছে। শঙ্খ আকৃতির প্রদীপ, উট বা হাতির পিঠে নকশা করা প্রদীপ, প্লেটের উপর নকশা করা প্রদীপ, পুঁতি বসানো বা চিকনের কাজ করা ভাসমান মোমদানিও পেয়ে যাবেন এখানে।