রঞ্জি ট্রফির দল ঘোষণা হতেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল বৈভব সূর্যবংশী। বিহারের এই ক্রিকেটারের বয়স ১২ বছর। কিন্তু জায়গা করে নিয়েছে রঞ্জি দলে। সচিন তেন্ডুলকর, যুবরাজ সিংহের মতো খেলোয়াড়কে মনে করিয়ে দেয় ছোট্ট বৈভব। এত কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁরাও খেলেননি।
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ অভিষেক হয় বৈভবের। বিহারের সভাপতির বেছে নেওয়া দলে ছিল সে। কিন্তু সচিবের বেছে নেওয়া দলে ছিল না। শেষ পর্যন্ত সভাপতির দল রঞ্জিতে খেলায় সুযোগ পায় বৈভব। খেলে ছত্তিসগঢ়ের বিরুদ্ধেও। দুই ম্যাচে ৩১ রান করা বৈভব যদিও জানত না কোন কোন ক্রিকেটারের থেকেও কম বয়সে রঞ্জি খেলছে সে। বিহারের ওই খেলোয়াড় এক সাক্ষাৎকারে বলে, “আমি রেকর্ডের কথা জানতাম না। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে আউট হয়ে সাজঘরের ফেরার পর সতীর্থেরা বলে যে আমি সচিন এবং যুবরাজের মতো ক্রিকেটারের থেকেও কম বয়সে রঞ্জি খেলেছি। খুব আনন্দ হয়েছিল শুনে। ভাবতেই পারিনি ওঁদের সঙ্গে আমার নাম নেওয়া হবে।”
১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হল মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড হল না তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিনের। আজমেরের ক্রিকেটারের রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়েছিল ১৯৪২-৪৩ মরসুমে বরোদার বিরুদ্ধে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১২ বছর ৭৩ দিন। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন এসকে বোস। ১৯৫৯-৬০ মরসুমে ১২ বছর ৭৬ দিন বয়সে অসমের হয়ে বিহারের বিরুদ্ধে রঞ্জি অভিষেক হয়েছিল তাঁর। এই তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মহম্মদ রমজ়ান। ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে ১২ বছর ২৪৭ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির অভিষেক হয়েছিল তাঁর। রঞ্জি ট্রফিতে তৎকালীন নর্দার্ন ইন্ডিয়ার হয়ে ইউনাইটেড প্রভিন্সের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন তিনি। সচিন এবং যুবরাজ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন ১৫ বছর বয়সে।
প্রথম বল খেলতে নামার আগে চাপ অনুভব করছিল বৈভব। সে বলে, “অভিষেক ম্যাচে টুপিটা পেয়ে দারুণ লেগেছিল। চাপ লাগছিল। কিন্তু সিনিয়র এবং কোচদের থেকে খুব সাহায্য পেয়েছি। ক্রিজ়ে যাওয়ার পর দেখি দলের সকলে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। প্রথম বলটা খেলার পর কিছুটা স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।”
পাটনার মইন-উল হক স্টেডিয়ামে নামার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের চতুর্থ কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার নজির গড়েছে বৈভব। গত কুচবিহার ট্রফিতে বিহারের হয়ে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল বৈভব। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে করেছিল ১২৮ বলে ১৫১ রান। ২২টি চার এবং ৩টি ছক্কা এসেছিল তার ব্যাট থেকে। সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে বৈভব করে ৭৬ রান। এ ছাড়াও ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ ‘এ’, ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’, ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব ১৯ এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯-কে নিয়ে চর্তুদলীয় প্রতিযোগিতাতেও সফল হয়েছিল বৈভব। প্রতিযোগিতার দু’টি ম্যাচে শূন্য করলেও তিনটি ম্যাচে সে করেছিল ৫৩, ৭৪ এবং ৪১ রান। সেই সাফল্যের পরেই বিহারের রঞ্জি দলে নির্বাচিত হয়েছে বৈভব। টস জিতে মুম্বই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুক্রবার ব্যাট করার সুযোগ পায়নি ১২ বছরের কিশোর।