Curd: ‘দই, দই, ভালো দই!’ বাংলার দইওয়ালাদের কপালে ভাঁজ, দাম বাড়ানোয় কমছে ক্রেতা


চিঁড়ে-মুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ বার অগ্নিমূল্য দইও। এপ্রিলে বেড়েছিল চিঁড়ের দাম। জুলাইয়ে জিএসটি ও চালের দাম বৃদ্ধির কারণে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কেজি প্রতি মুড়ির দামও। অগস্টের শুরুতে সেই জিএসটি ও কাঁচা দুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দুধ উৎপাদক সংস্থাগুলি কেজি প্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা বাড়ানোয় প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ হারে দই-লস্যির দাম বেড়েছে। দইয়ের দাম বৃদ্ধিতে ভাঁজ পড়েছে মধ্যবিত্তের কপালে।

বাড়িতে চটজলদি বিকেলের টিফিন হোক বা ভূরিভোজের পর ‌শেষপাতে মিষ্টিমুখ, বাঙালির কাছে দই কিন্তু বিকল্পহীন। কয়েক বছর আগেও দইবিহীন নেমন্তন্ন বাড়ি ভাবা যেত না। হাল আমলে কিছু বিকল্প চলে এলেও দই তার নিজের জায়গাতেই রয়েছে। বহু পরিবারই দইকে পরিবারের ‘কুলীন সদস্য’ হিসাবে দেখে, যার ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ বিচার হয় শুভ্রতা দিয়ে। তার দাম এ ভাবে বাড়তে থাকলে কিছু দিনের মধ্যে তা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে বলেই মনে করছেন ক্রেতারা। বহরমপুরের বাসিন্দা সঞ্চিতা সরকার বলছেন, ‘‘এ ভাবে সব জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে খাব কী? চিঁড়ে-মুড়ির পর এ বার দইয়েরও দাম বেড়ে গেল! এত দিন দই কিনে ঘরে রেখে দিতাম। যাতে ইচ্ছে করলেই খেতে পারি। এ ভাবে চলতে থাকলে তো সেটা আর সম্ভব হবে না।’’

এত দিন দুগ্ধজাত দ্রব্য জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর)-র আওতায় ছিল না। গত জুলাই থেকে দুগ্ধজাত সব জিনিসের উপর পাঁচ শতাংশ জিএসটি বসায় বাজারে দইয়ের দাম বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিসের মোড়ে মিষ্টির দোকান রয়েছে রূপক সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘১০ টাকার লস্যির প্যাকেট এখন ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়। ক্রেতাদের থেকে বেশি দাম নিতে অস্বস্তিও হয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়!’’ দইয়ের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে একটি বহুজাতিক দুধ উৎপাদক সংস্থার নদিয়া জেলা ম্যানেজার অরকেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘দুধের নাম না বাড়লে গো-পালকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হত।’’

শুধু প্যাকেটজাত দই বা লস্যির দামই বাড়েনি। মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ভাঁড়ের দেশি দইয়েও। অতুলনীয় স্বাদের জন্য নবদ্বীপের লাল দই বাংলা তথা ভারতবিখ্যাত। সেই দইয়ের দামও কেজি প্রতি প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে। মাসখানেক আগেও নবদ্বীপের যে ‘চাক্কু দই’ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হত, মূল্যবৃদ্ধির জেরে এখন তা তিনশোর গণ্ডি পেরিয়েছে। দীর্ঘ দিনের দই ব্যবসায়ী অজয় মোদক বলেন, ‘‘প্রথমত, খাঁটি দুধ পাওয়া খুব মুশকিল। পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ায় দূরের গ্রাম থেকে দুধ নিয়ে আসার পরিবহণ খরচও বেড়েছে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দইয়ের দামও বাড়াতে হয়েছে আমাদের।’’

মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের সীমান্তের কাছে রঘুনাথগঞ্জের ঝুড়ি দই বাংলায় প্রসিদ্ধ। স্বাদ ও গুণগত মানের দিক থেকে এই দইকে অনেকেই ‘শ্রেষ্ঠ’ মনে করেন। গত সপ্তাহ থেকে ওই দইয়ের দাম কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা বেড়েছে। রঘুনাথগঞ্জের দই ব্যবসায়ী সুবীর ঘোষ বলেন, ‘‘দুধের দাম তো একটা বড় কারণ। তার পাশাপাশি চিনি ও আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ঝুড়ি দইয়ের দামের উপর।’’ সম্প্রতি দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলা বিখ্যাত কোচবিহারের বানেশ্বরের চাক দইয়ের বিক্রি কমেছে অনেকটা। বানেশ্বরের ব্যবসায়ী রূপক কুন্ডু বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগেও যেখানে প্রতি দিন কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার টাকার দই কেনাবেচা হত, তা এখন ১০ হাজারের মধ্যে এসে ঠেকেছে।’’

হরেক রকম দইয়ের তালিকায় রয়েছে গঙ্গারামপুরের বিখ্যাত চন্দন চূড় ও ক্ষীর খাস দইও। এই দইয়ের বিশেষত্ব হল, তেঁতুল কাঠের জ্বালানি ব্যবহার করে তৈরি হয় ওই দই। আর পরিবেশিত হয় কলসিতে। এই দইয়ের ব্যবসায়ী প্রভাস ঘোষ বলেন, ‘‘উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দইয়ের দাম নির্ধারণ করলে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। তাই খুব কম লাভেই এখনও দই বিক্রি করছি। জানি না কত দিন এ ভাবে চালাতে পারব।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.