নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হয়! কেউ এসে লড়বে না। এই ‘নীতিকথা’ বলা হয়তো খুব সহজ, কিন্তু বাস্তবে তা অত্য়ন্ত কঠিন। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার রাস্তাই খুঁজে পায় না অনেকে। সেখানে এক কিশোর হাল না ছাড়ার মন্ত্রে দিক্ষীত হয়ে বুঝিয়েছে ‘দ্য় কামব্য়াক ইজ গ্রেটার দ্য়ান দ্য় সেটব্য়াক!’ শিরোনাম পড়েই বুঝতে পেরেছেন যে, প্রতিদিন যে খবরগুলি আপনার চোখে পড়ে, তার চেয়ে এই খবর একটু আলাদাই হতে চলেছে। যা আপনাকে ভাবাবে, বেঁচে থাকার নতুন করে রসদ দেবে।
এবার আসা যাক খবরে। বারো বছর আগের অমিত চৌধুরীর বয়স ছিল ১৮। তিনি এমন এক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তা তিনি করেননি! উত্তরপ্রদেশের মীরাটে দুই কনস্টেবলকে হত্যার দায়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় তাঁর কাঁধে। এখানেই শেষ নয়, জুটে যায় ‘গ্য়াংস্টার’-এর তকমা। উত্তরপ্রদেশে সে সময়ে মুখ্য়মন্ত্রী ছিলেন মায়াবতী। তাঁর কানে এই খবর আসতেই, তিনি অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাতারাতি অমিতের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ঘটনার সময়ে অমিত তাঁর বোনের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের শহর শামলিতে ছিলেন। তবুও কনস্টেবল হত্যায় অভিযুক্ত ১৭ জনের মধ্যে তাঁর নাম চলে আসে। ভারতীয় দণ্ডবিধি ও জাতীয় নিরাপত্তা আইনে অমিতের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও এই খুন করেছিল কুখ্য়াত কালী গ্য়াং। অমিতের দু’বছরের কারাদণ্ড হয়। আর বধ্য়ভূমিকেই তিনি বদলে দেন চারণ ভূমিতে! নিজের ভাগ্য় লিখে ফেলেন। শুরু করেন আইন নিয়ে পড়াশোনা। প্রমাণ করে দেন যে, তাঁর কোনও দোষই নেই।
কৃষক পরিবারের অমিত কিন্তু জেলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারেননি। তিনি বলছেন, ‘মুজাফফরনগর জেলে কুখ্য়াত গ্য়াংস্টার অনিল দুজানা ও ভিকি ত্য়াগী (দু’জনেরই এনকাউন্টার হয়) আমাকে ওদের দলে টানার চেষ্টা করেছিল অপরাধমূলক কার্যকলাপের মাধ্য়মে। তবে জেলর ছিলেন ভালো মানুষ। তিনি বুঝতে পারেন। আমাকে পাঠান ব্য়ারাকে। যেখানে গ্য়াংস্টাররা ছিল না।’ অমিত বদ্ধপরিকর ছিলেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য়। যাতে তাঁর পরিবারের লোক মাথা তুলে সমাজে বাস করতে পারে। যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্য়েই বিএ, এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন অমিত। বার কাউন্সিলের পরীক্ষাও পাশ করেন। অমিত বলেন, ‘সেই সময়ে কোন বিবৃতি নথিভুক্ত না করেই, আমরা মামলাটি শামুকের গতিতে চলছিল৷ ততক্ষণে, আমি আইনজীবী হিসাবে বারে যোগদানের জন্য যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্য়তা অর্জন করে ফেলি। একাগ্র হয়ে শুধু মামলাতেই করেছিলাম ফোকাস।
আইনজীবী হিসাবে যখন নিজেই নিজের মামলা লড়ছিলাম, তখন কাগঠড়ায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য় দাঁড়িয়ে থাকা আধিকারিকরাও আমাকে চিনতে পারেননি। বিষয়টি বিচারককে বিভ্রান্ত করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেন যে, আমাকে ভুলভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’ কনস্টেবল হত্য়ার মূলচক্রী সুমিত কালী, নীতু ও ধর্মেন্দ্রর ছিল আলাদা ললাটলিখন। কালীকে ২০১৩ সালে এনকাউন্টার করা হয়। নীতুর আজীবন কারাদণ্ডের সঙ্গেই ২০ হাজার টাকার জরিমানা হয়। সে কনস্টেবলের বন্দুকও কেড়ে নিয়েছিল। ধর্মেন্দ্র বিচারের আগেই তার ক্য়ানসার ধরা পড়ে। অমিত বলছেন, ‘প্রস্তুতি নিয়েও আমার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হয়। তবে ২০১১ সালের ওই কালো রাত আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমি ফৌজদারি বিচার নিয়ে পিএইচডি করতে চাই। আমি মনে করি ঈশ্বর আমাকে বাকি হতভাগ্যদের জন্য লড়াইয়ের জন্য বেছে নিয়েছেন। এটাই এখন আমার নিয়তি।’ অমিত দেখিয়ে দিলেন মানুষের অধ্য়বশায় তাঁকে কোন জায়গা থেকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।