অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দু’ঘণ্টার জবাবি ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী। তবে তাঁর বক্তব্যের প্রথম এক ঘন্টায় মণিপুর না থাকায় সংসদ থেকে ওয়ার্ক আউট করেন বিরোধীরা। কিন্তু নিজের বক্তব্যের শেষ অংশে মণিপুরের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের বাসিন্দাদের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, দেশ ও সংসদ তাদের সাথে রয়েছে। একই সঙ্গে মণিপুরের পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসের রাজনীতিকেই দায়ী করেন তিনি। দিনের শেষে ধনী ভোটে পরাজিত হয় অনাস্থা প্রস্তাব।
প্রস্তাবের জবাবি ভাষণে আগাগোড়াই ইন্ডিয়া জোট এবং গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ শানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম থেকেই মোদীর লক্ষ্য ছিল বিরোধী জোট শিবির ইন্ডিয়া। বক্তব্যের প্রথম এক ঘন্টাতেই মণিপুরের প্রসঙ্গ না তোলায় ওয়াক আউট করে ইন্ডিয়ার জোটের দলগুলি। এরপরেই মোদী বলেন, এমন ভাবে মণিপুরের পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে, যেনো সেখানে সদ্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। তার কথায় উত্তর পূর্বে সমস্যার জননী কংগ্রেস। মণিপুরের অশান্তির দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোষীদের যাতে কঠোর শাস্তি হয় সম্মিলিতভাবে তার চেষ্টা চালাচ্ছে মণিপুরে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তিনি বলেন, “আমি সেখানকার বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, মণিপুরে শান্তি ফিরবে। আমি সেখানকার মা ও বোনেদের বার্তা দিতে চাই সারা দেশ এবং সংসদ তাদের সঙ্গে রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্ব আমাদের শরীরের একটি অঙ্গ। মণিপুর সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা অমিত শাহ দিয়েছেন। সেখানকার পরিস্থিতির জন্য দায়ী কংগ্রেসের রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রীর কথায় কংগ্রেস আমলে মণিপুর জঙ্গি উপদ্রব ভোগ করেছে। একটা সময় মণিপুরের সব কাজ হতো জঙ্গি সংগঠনের কথায়। তখন ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। মণিপুরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বারণ ছিল। তখনও ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। তাঁর দাবি, ১৯৬৬ সালে মিজোরামে বোমা ফেলতে বায়ু সেনাকে ব্যবহার করেছিল কংগ্রেস। আমি তাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, কেন আমাদের দেশের মানুষের উপর বোমা ফেলা হয়েছিল? সেই সত্য গোপন করার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস।” মোদী দাবি করেন, অভিযোগ উঠেছিল উত্তর-পূর্বের উন্নয়ন চাননি জহরলাল নেহেরু।
তবে দু’ঘণ্টার বক্তব্যে বেশিরভাগ সময়টা ইন্ডিয়া জোটের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কটাক্ষ, বিরোধীরা ফিল্ডিং করছে আর চার, ছক্কা হাঁকাচ্ছে ট্রেজারি বেঞ্চ। বিরোধীরা একের পর এক নো বল করে যাচ্ছে।
অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “কলকাতা থেকে হয়তো ফোন এসেছিল, সেই জন্যই দলের মূল বক্তার তালিকায় আপনাকে রাখা হয়নি। আপনার প্রতি পূর্ণ সমবেদনা জানাচ্ছি।”মোদীর কথায়,” বিরোধীরা যার খারাপ চাইবে তারই ভালো হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত তিনদিন ধরে বিরোধী শিবির শব্দকোষ খুঁজে খুঁজে বের করে অপ শব্দের ব্যবহার করেছেন। তার বক্তব্য কংগ্রেসকে মানুষ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই কারণেই বাংলায় তাদের কোনো বিধায়ক নেই। তাঁর কথায়, “একদিকে আপনারা ইউপি-এর অন্তিম সংস্কার করেছেন অন্যদিকে তার উদযাপন করছেন। বহু দশকের পুরনো গাড়িতে রং লাগানো হয়েছে।”
বিরোধী জোটের নামকরণ নিয়ে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, বিরোধীদের জোটের নামকরণ করতেও এনডিএ-র সাহায্য নিতে হয়েছে। তাদের জোটের নামের মধ্যে দুটি আই যোগ করা হয়েছে। একটি তাদের সম্মিলিত অহংকারের আই, অন্যটি একটি আই হলো একটি পরিবারের অহংকার। এরাই ভারতকে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলায় তৃণমূল এবং সিপিএমের লড়াই, অন্যদিকে দিল্লিতে তারা একে অপরের হাত ধরে বসে আছে। অহংকারের রাজনীতি পরিবারবাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রতিফলন এই জোট।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে কংগ্রেসের নেতা রঞ্জন গগৈ বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। মণিপুর নিয়ে প্রশ্নের জবাব না মেলায় আমরা ওয়াকা আউট করেছি।”
তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ ব্যানার্জি বলেছেন, “লোকসভার আনাস্থার জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই ধরনের বক্তব্য মানুষ প্রত্যাশা করেন না। তিনি আসলে নির্বাচনী প্রচার করে গেছেন।”