বেঙ্গালুরুতে নয়া বিরোধী জোটের আত্মপ্রকাশের পরেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির অশোকা হোটেল বিজেপি এবং তার সহযোগী ৩৭টি দলের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশক থেকেই দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে রাজনৈতিক জোটকে ব্যবহার করেছে কংগ্রেস। কখনও সরকার বানিয়েছে, কখনও ফেলেছে।’’
এনডিএ জোটের ন’বছরের শাসনে অর্থনীতি থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে দেশে নজিরবিহনীন উন্নতি হয়েছে জানিয়ে সহযোগী দলগুলির নেতাদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে ২০২৪ সালেও এনডিএ আবার ক্ষমতায় আসবে। দেশের মানুষ দেখতে পাবেন, ইতিহাস কী, রসায়নই বা কী?’’ তাঁকে হারানোর জন্য বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দল যে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গড়েছে, তা সফল হবে না বলে দাবি করে মোদী বলেন, ‘‘নেতিবাচক কর্মসূচির উপর গড়ে ওঠা কোনও জোট সফল হতে পারে না।’’
বিরোধীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রেরও অভিযোগ তুলেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘ওটা তো দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রের জোট। কেউ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলেই বিরোধী জোটে প্রবেশাধিকার পেয়ে যান।’’ ঘটনাচক্রে, পিছনেই তখন বসে কয়েক হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের বিদ্রোহী ভাইপে অজিত পওয়ার। সে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে একদা যাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘এনসিপি মানে ন্যাচারালি করাপ্ট পার্টি।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতাদর্শের দিক থেকে ভিন্ন অবস্থানে থাকা বিভিন্ন দলগুলি শুধুমাত্র মোদীর বিরোধিতাকে পুঁজি করেই যে এক মঞ্চে এসেছে তা বুঝতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সে কারণে গোড়া থেকেই আক্রমণাত্মক তিনি। এমনকি, নাম না করে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেও নির্দিষ্ট জাতির বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের দায়ে জেলের সাজা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মোদী।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের মঙ্গলবারের বৈঠকে হাজির ছিল শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে), এনসিপি (অজিত পওয়ার), রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি (পশুপতি পারস), এডিএমকে (পলানীস্বামী), আপনা দল (সোনেলাল), এনপিপি, এনডিপিপি (নাগাল্যান্ড), আজসু, সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট, আইপিএফটি, নাগা পিপল্স ফ্রন্ট, আরপিআই (অঠওয়ালে), অসম গণ পরিষদ, পিএমকে, তামিল মনিলা কংগ্রেস, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল, সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি, শিরোমণি অকালি দল (সংযুক্ত), মহারাষ্ট্রওয়াড়ি গোমন্তক পার্টি, জননায়ক জনতা পার্টি, প্রহার জনশক্তি পার্টি, রাষ্ট্রীয় সমাজ পক্ষ, জনসূর্য শক্তি পার্টি, কুকি পিপলস্ অ্যালায়ান্স, ইউডিপি (মেঘালয়), এইচএসপিডিপি, নিষাদ পার্টি, অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেস, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা, জনসেনা পার্টি, হরিয়ানা লোকহিত পার্টি, ভারত ধর্ম জনসেনা, কেরল কামরাজ কংগ্রেস, পুথিয়া তামিলনাগম, লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) এবং দার্জিলিং পাহাড়ের দল জিএনএলএফ।
তবে বিজেপির তরফে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সুখবীর বাদলের ‘শিরোমণি অকালি দল’ মঙ্গলবারের এনডিএ বৈঠকে যোগ দেয়নি বলে সূত্রের খবর। অন্য দিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সক্রিয় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি বলে খবর। তবে বিরোধী শিবিরের সাম্প্রতিক তৎপরতার আবহে বিজেপির এই উদ্যোগকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। প্রথম মোদী সরকারের আমলে এনডিএর নিয়মিত বৈঠক হলেও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি একারই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাওয়ার এনডিএ কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল। গত চার বছর ধরে জোটের কোনও বৈঠকও হয়নি।
কিন্তু কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের কাছে পর্যুদস্ত হওয়া, বিরোধীদের একজোট হওয়া, আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট এবং সর্বোপরি আগামী বছরের লোকসভা ভোটকে নজরে রেখেই বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব আবার শরিকদের প্রয়োজন অনুভব করতে শুরু করেছেন বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। একই উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে পুরনো শরিকদের নতুন করে কাছে টানার প্রক্রিয়াও। বিরোধী দলগুলি যে ভাবে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে চাপের মুখে পড়েছেন বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব। জোট-শক্তির বিচারে ধারে এবং ভারে বিরোধীরা যে ভাবে শক্তি বৃদ্ধি করছে, তাতে দল কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে। তাঁদের মতে, সে কারণেই দ্রুত নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনডিএ-র সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছেন মোদী-শাহ-নড্ডারা।