বিগত কয়েক দশক ধরে ক্রমেই হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে বাংলাদেশে। ক্রমাগত হামলা ও হুমকির জেরে বহু হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিশ্বের অন্যান্য দেশে। সম্প্রতি ফের একবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনা ঘটে। গত এক সপ্তাহের মধ্যেই বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে হিন্দুদের উপর। তবে এই হামলা বিক্ষিপ্ত নয়। গত ৮ বছরে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ৩৬০০-র বেশি হিংসাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে হিন্দুদের উপর হামলাকারীদের বিচারের অধীনে আনা সম্ভব হয়নি।
সরকারি হিসাবে হিন্দুদের উপর হামলার সংখ্যা ৩৬০০ হলেও বাংলাদেশ হিন্দু-বুদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে যে হামলার প্রকৃত সংখ্যা ৩৬০০-র অনেক বেশি। দেখা গিয়েছে যে গত আট বছরে হিন্দুদের উপর হামলার মধ্যে রয়েছে ৫৫০টিরও বেশি বাড়ি এবং ৪৪০ টি দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। একই সময়ে হিন্দু মন্দির, প্রতিমা এবং উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ১,৬৭০টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। সদ্য শেষ হওয়া পুজোর আগে পর্যন্ত এই সব সহিংস ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ১১ জন সদস্য মারা গিয়েছেন। এবং আরও ৮৬২ জন জখম হয়েছেন। এই সময় হিন্দু মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বুদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এই বিষয়ে সংবাদ সংস্থাকে জানান, এই ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরকারি হিসেবের থেকে অনেক বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদিও ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে হিন্দুদের উপর হামলা হত। আমরা ২০১১ থেকে এই ধরনের হামলার একটি ধারাবাহিক নিদর্শন লক্ষ্য করছি। এটা বেশ উদ্বেগজনক। আমরা ভেবেছিলাম আওয়ামী লিগ সরকারের অধীনে হিন্দু সম্প্রদায় উন্নত জীবন পাবে, কিন্তু তা হয়নি।
বাংলাদেশে এখন হিন্দুরা মোট জনসংখ্যার নয় শতাংশেরও কম। সরকারি তথ্য বলছে, গত চার দশকে হিন্দু জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য হ্রাস হয়েছে। গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যার শতাংশ ১৩.৫ থেকে ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বামপন্থী রাজনৈতিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনাইদ সাকি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘আওয়ামী লিগ এই সব হামলার নিন্দা জানায়, কিন্তু হামলা আটকাতে কিছু করে না। এই হামলার ধরন একই। প্রথমে ইসলামের অপমান হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট হয়। তাই ভাইরাল হয়ে গিয়ে অশান্তি ছড়ায়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার অষ্টমীর দিন থেকে বাংলাদেশে তীব্র হিংসা ছড়াতে শুরু করেছে। অভিযোগ, ওই দেশের কুমিল্লার একটি পুজো মণ্ডপে ভাঙচুরের পর থেকেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এরপর বহু পুজো মণ্ডপ, মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়। বিভিন্ন এলাকায় ৬৬টি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অন্তত ২০টি বাড়ি। বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। নোয়াখালির একটি ইসকন মন্দিরেও হামলা চালানো হয়। এই হিংসার ঘটনায় দেশজুড়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়।