ঝকঝকে জিনিস। দামও নামমাত্র। সেটি যে পুরনো, তা ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই! ফলে না কেনার লোভ সামলানো কঠিন। মাসখানেক আগে পুরনো জিনিস কেনাবেচার অ্যাপে পাতা এমনই ফাঁদে পড়ে এখন বিপাকে যাদবপুরের এক কলেজপড়ুয়া! আপাতত থানা-পুলিশে ‘হাজিরা’ দিয়েও রেহাই মিলছে না বলে দাবি।
ঘটনার সূত্রপাত মে-র শুরুর দিকে। যাদবপুরের বিজয়গড়ের বাসিন্দা, বছর কুড়ির দীপ ভৌমিক পুরনো জিনিস কেনাবেচার একটি অ্যাপে মোবাইল ফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেন। নেতাজিনগর কলেজে বি-কমের প্রথমবর্ষের ছাত্র দীপের মোবাইলটি পছন্দ হওয়ায় অ্যাপে দেওয়া বিক্রেতার নম্বরে যোগাযোগ করেন। কত দিনের পুরনো ফোন, কত দাম, বিল আছে কি না, সব বিস্তারিত জানার পরে মোবাইলটি কিনবেন বলে স্থির করেন ওই পড়ুয়া। তিনি নিজেই বিক্রেতার বাড়ি গিয়ে ফোন নিয়ে আসবেন বলে জানান। প্রাথমিক ভাবে বিক্রেতা রাজি হলেও পরে তিনি নিজেই ফোনটি দিয়ে যাবেন বলে জানান। দীপের কথায়, ‘‘মে-র গোড়ায় ফোন করে আমাকে প্রথমে রবীন্দ্র সরোবরের কাছে আসতে বলেন তিনি। পরে সায়েন্স সিটিতে যেতে বলেন বিক্রেতা। আমি সায়েন্স সিটির মোড়ে গিয়ে ফোন নিয়ে আসি।’’
দীপ জানান, প্রথমে সাড়ে চার হাজার টাকা দাম ঠিক হয়েছিল। কিন্তু, মোবাইলটি দেখে দীপের দু’-একটি জায়গায় সমস্যা মনে হওয়ায় সেটি তিনি নেবেন না বলে বিক্রেতাকে জানান। বিক্রেতা দাম কমিয়ে দেওয়ায় মোবাইলটি নিতে রাজি হয়ে যান দীপ।
তিনি বলেন, ‘‘তিন হাজার আটশো টাকা দিয়েছিলাম। আমাকে মোবাইলের বিল-সহ যাবতীয় কাগজ দিয়ে বিক্রেতা দ্রুত মোটরবাইক নিয়ে চলে যান।’’ এর পরে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাননি বলেদীপের দাবি।
দীপ জানান, দিন কুড়ি সেটি ব্যবহার করার পরে বুধবার দুপুরে একটি ফোন আসে। পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি তাঁর নাম, পরিচয় জানার পরে দ্রুত মোবাইল নিয়ে লালবাজারে আসার নির্দেশ দেন। সে দিন বিকেলেই লালবাজারে যান দীপ। জানতে পারেন, মাস দুই আগে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন তিনি। তাঁর কাছে থাকা মোবাইলের রসিদ দেখালে সেটি পরীক্ষা করে নকল বলে জানিয়ে দেন পুলিশআধিকারিকেরা।
কলেজপড়ুয়া বলেন, ‘‘ওঁদের কথা শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য এটাই মনে হচ্ছিল, মোবাইলটি আমি চুরি করেছি। বিলটি ভুয়ো প্রমাণিত হওয়ায় সেটি যে আমি কিনেছি, এটা বিশ্বাস করানোই কঠিন হয়ে যায়। যাঁর থেকে মোবাইল কিনেছিলাম, তাঁকেও আর ফোনে না পাওয়ায় সমস্যা বেড়ে যায়।’’ মোবাইলটি লালবাজারে জমা নিয়ে পড়ুয়াকে সতর্ক করা হলেও প্রয়োজনে ফের তাঁকে ডাকা হতে পারে বলেই তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। ফলে আতঙ্ক কাটছে না ওই পড়ুয়ার।
লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘পুরনো জিনিস কেনাবেচায় একটি অসাধু চক্র বরাবর সক্রিয়। কোনও জিনিস কেনার আগে সতর্ক না হলেই মুশকিল। এ সব জায়গা থেকে জিনিস কেনার ক্ষেত্রে বিলের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিক্রেতার পরিচয়ও।’’