এক বার ক্যানসারকে হারিয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বারও ক্যানসারকে হারালেন ৬৯ বছরের টেনিস কিংবদন্তি ক্রিস এভার্ট। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন ১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন। তিনি বার্তা দিয়েছেন, “আমি এ ভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যাব।”
৬ মাস আগে এভার্ট জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় বার ক্যানসার হয়েছে তাঁর। ৬ মাস পরেই তাঁকে দেখা যাচ্ছে উইম্বলডনের ধারাভাষ্যকারদের তালিকায়। গত সপ্তাহে ফ্লরিডায় নিজের বাড়িতে ছিলেন এভার্ট। সেখান থেকে লন্ডনে গিয়েছেন তিনি। আগামী দু’সপ্তাহ ব্যস্ত থাকবেন উইম্বলডন নিয়ে। ক্যানসার থামাতে পারেনি তাঁকে। বাড়িতেও যে তিনি শুয়ে-বসেছিলেন তা নয়, তাঁর সংস্থার হয়ে সমাজসেবার কাজ করেছেন। কেমোথেরাপির জায়গা নিয়েছে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। ডেনভারে সদ্যোজাত নাতিকে দেখতেও গিয়েছিলেন এভার্ট। সেখান থেকে ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, “আমি এখনই এই ছোট্ট বাচ্চার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। আরও বেশি করে বাঁচতে ইচ্ছা করছে।”
দু’বছর আগে নিজের প্রথম ক্যানসারের কথা জানিয়েছিলেন এভার্ট। তাঁর বোনের জরায়ুতে ক্যানসার হয়েছিল। বোন মারা যাওয়ার পরে এভার্টেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতেই ধরা পড়ে যে তিনিও স্টেজ ১ জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কেমোথেরাপি নিতে হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কেমোথেরাপির ফলে এভার্টের মাথার চুল পড়ে গিয়েছিল। সেরে ওঠার আশা এভার্টকে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তিনি সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। তার পরে আবার মাথায় চুল গজায় তাঁর।
সুস্থ হয়ে কাজে ফেরেন এভার্ট। ধারাভাষ্যের কাজ শুরু করেন। নিজের টেনিস অ্যাকাডেমিতেও নিয়মিত যেতেন। আমেরিকার টেনিস সংস্থার একটি শাখা ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য কাজ করে। সেই শাখার দায়িত্বে রয়েছেন এভার্ট। সংস্থাকে অর্থের জোগান দেওয়া তাঁর প্রধান কাজ। তার মাঝেই গত ডিসেম্বর মাসে আবার ক্যানসার ফিরে আসে তাঁর শরীরে। এক বার ক্যানসার আক্রাম্তদের দ্বিতীয় বার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তাঁদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয়। এভার্টকেও করাতে হয়। সেটা করাতে গিয়েই দ্বিতীয় বার ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর।
ফলে আরও এক বার সেই পুরনো পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এভার্টকে। দ্বিতীয় বারও ক্যানসারকে হারান এভার্ট। একটি ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, “চিকিৎসকেরা সবসময় আশাবাদী ছিলেন। ক্যানসার দ্বিতীয় বার শরীরে ফিরলে পরে আবার ফিরতে পারে। কেউ ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার পরে আরও ৩০-৪০ বছর বাঁচেন। কত সুন্দর সুন্দর গল্প আছে। তবে সবসময় সেটা হয় না। কিন্তু আমার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আমি ক্যানসারে মারা যাব না।”
গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। আরও কেমোথেরাপি হয়। সেই সময় তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন ছিল তা জানিয়েছেন এভার্ট। তিনি বলেন, “প্রথম চার-পাঁচ দিন খুব দুর্বল লাগছিল। বমি পাচ্ছিল। গোটা শরীরে ব্যথা ছিল। চার-পাঁচ দিন পরে সে সব চলে যায়। আড়াই সপ্তাহ পর থেকে শরীর সুস্থ হতে শুরু করে। গত ২৫-৩০ বছরে কেমোথেরাপি এত উন্নত হয়েছে, বলে বোঝাতে পারব না।” এভার্টকে কেমোথেরাপির ছ’টি রাউন্ডের কথা বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু চার রাউন্ডের পরে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছিল। ফলে কেমোথেরাপি বন্ধ করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তত দিনে ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁকে চিকিৎসকেরা চারটি ওষুধ দিয়েছেন। আগামী দু’বছর প্রতি দিন সেগুলি খেতে হবে।
অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপির ফলে শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। এভার্টেরও হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়েই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। আবার দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। এভার্ট বলেন, “আপনি আতঙ্কে বাঁচতে পারবেন না। বিশ্বাস রাখতে হবে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। বাকিটা চিকিৎসকদের উপর নির্ভর করছে।”
দ্বিতীয় বার ক্যানসার হওয়ায় এই বছর জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে থাকতে পারেননি এভার্ট। মে মাসে ফরাসি ওপেনে অবশ্য গিয়েছিলেন। সেখানে ধারাভাষ্যও দেন। চলতি মাসে উইম্বলডন শেষে নিউ ইয়র্কে গিয়ে ইউএস ওপেনে ধারাভাষ্য দেবেন এভার্ট। সেখানে নিজের সংস্থার হয়ে অর্থ সংগ্রহের কাজও করবেন। ২০১৯ সালে এই সংস্থার প্রধান হয়েছিলেন এভার্ট। সাধারণত, কোনও প্রধান তিন বছর দায়িত্বে থাকেন। এভার্ট ইতিমধ্যেই পাঁচ বছর এই দায়িত্ব সামলেছেন। এই সময়ে সংস্থাকে ৪৫৯ কোটি টাকা অর্থ সংগ্রহ করে দিয়েছেন তিনি। সংস্থার বাকি আধিকারিকেরা এভার্টকে আরও অনেক দিন এই পদে রাখতে চান। ছ’বার ইউএস ওপেন জেতা এভার্ট যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তা বোঝা যাচ্ছে।
থামতে চান না এভার্ট। এগিয়ে যেতে চান। সামনের দিকে। জীবনের দিকে। কাজের দিকে। তাই তো দু’বার ক্যানসার হওয়ার পরেও তিনি বলেন, “আমি জীবনকে উপভোগ করা থামাব না। আমি এগিয়ে যাব। এ ভাবেই এগিয়ে যাব।”