আকাশপথের পরে এ বার অবরোধ জলপথে। ছ’দিক থেকে ঘিরে চিনসাগরের ‘দ্বীপরাষ্ট্রের’ বন্দরগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্রিয় হয়েছে বেজিং। শুক্রবার থেকে ফুজিয়ান প্রদেশ লাগোয়া তাইওয়ান প্রণালীর পিংটন দ্বীপের অদূরে আকাশ এবং জলযুদ্ধের মহড়া শুরু করেছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। তাইওয়ান থেকে এই এলাকার দূরত্ব ২০ কিলোমিটারেরও কম। গত সাত দশকের সঙ্ঘাত-পর্বে কখনওই তাইওয়ান সীমান্তের এত কাছে চিনা ফৌজের যুদ্ধ মহড়া হয়নি।
আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার থেকে যে উত্তেজনার স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে শুরু করেছিল, শনিবার সকাল থেকে তা কার্যত তুঙ্গে উঠেছে। তাইওয়ান প্রণালী-সহ দক্ষিণ চিন সাগরের বিভিন্ন অংশে চিনা রণতরী ও ‘অ্যাম্ফিবিয়ান ল্যান্ডিং ভেহিকলস’ মোতায়েনের খবর মিলেছে। নেমেছে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ডুবোজাহাজও।
এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের নৌঘাঁটিগুলির পাশাপাশি বাণিজ্যিক বন্দরগুলির উপরেও ‘চাপ’ বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার চিনা ফৌজের ছোড়া পাঁচটি ক্ষেপনাস্ত্র গিয়ে পড়ে তাইওয়ান সংলগ্ন পূর্ব চিন সাগরে, জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে। তার পর থেকে ওই এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের দাবি, তাইওয়ানের মোট ছ’টি বড় বন্দরকে নিশানা করছে চিন। রাজধানী তাইপেইয়ের পাশাপাশি উত্তরের কিলুং, পশ্চিমের সুয়াও এবং হুয়ালিয়েন, দক্ষিণ তাইওয়ানের কাওশিয়ুং এবং পূর্বের তাইচুয়াং বন্দর রয়েছে এই তালিকায়। চিনা জে-২০ স্টেল্থ ফাইটার জেট, টাইপ ০৫-২ডি ডেস্ট্রয়ার গোত্রের যুদ্ধজাহাজ এবং বেশ কিছু ছোট দ্রুতগতিসম্পন্ন কর্ভেট জলযান তাইওয়ানের জলসীমা লাগোয়া এলাকায় কার্যত বেড়াজাল তৈরি করেছে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর।
চিনা ফৌজের যুদ্ধ মহড়ার কারণে শুক্রবার থেকে বিভিন্ন বিদেশি বিমান সংস্থা তাইপেইয়ের শোংশান বিমানবন্দর থেকে এক-এক করে বিদেশি বিমান মুখ ঘুরিয়ে নিতে শুরু করেছে। কারণ, মহড়ার কারণে তাইওয়ানের আকাশপথে ঢুকতে পারছে না বিভিন্ন দেশের অসামরিক উড়ান। এই পরিস্থিতিতে জলপথও বন্ধ হলে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখ পড়তে পারে তাইওয়ান।