সারা ভারত তো উচ্ছ্বসিত ছিলই, সাগ্রহে ভারতের এই মুনমিশনের দিকে তাকিয়ে ছিল সারা বিশ্বও। সেই অপেক্ষা সার্থক হল। প্রতীক্ষার শুভ অবসান ঘটল। চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩ নামিয়ে ভারত তৈরি করল ইতিহাস। ভারতীয় মহাকাশবিজ্ঞানের পরিসরে ঘটে গেল এক যুগান্তর। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। সেই ল্যান্ডার সফল ভাবে অবতরণ করল। ফলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসেবে পা রাখল ভারত।
এত দিন চাঁদের অনাবিষ্কৃত এই দক্ষিণ মেরুতে কোনও দেশের চন্দ্রযানই নামেনি। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল চন্দ্রযান-৩। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথা ‘ইসরো’ আগেই জানিয়েছিল, চাঁদের নামার আগের শেষ কয়েকমিনিটই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই ফাঁড়া কাটিয়ে সাফল্যের মুখ দেখল চাঁদ-মিশন।
চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। শুভ মুহূর্তটি পেরিয়ে যেতেই ট্যুইট করেছে ইসরো। চন্দ্রযান-৩-এর বয়ানে লেখা সেই ট্যুইটে ইসরো বলছে– ‘ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি!’
চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ নামার পরেই, তার একটি অংশ স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে যাবে। একটি ‘ইনক্লাইন্ড প্ল্যাটফর্ম’ বা ঢালু জিনিস বেরিয়ে আসবে চাঁদের মাটিতে। ওই ঢালু পথ বেয়েই চাঁদের বুকে নামবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর ধীরে ধীরে চলা শুরু করবে ‘প্রজ্ঞান’। ছ’টি চাকা এর। সেকেন্ডে ১ সেন্টিমিটার করে পথ হাঁটবে সে। রোভারটির সঙ্গে থাকবে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা। চাঁদের মাটিতে অনুসন্ধান চালাবে এরা। ছবি তুলবে। ‘প্রজ্ঞান’ চাঁদ থেকে যা তথ্য সংগ্রহ করবে, তা সে পাঠিয়ে দেবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে। ‘বিক্রম’ তা পাঠাবে পৃথিবীতে। একাধিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে চাঁদে নামছে রোভার। চাঁদের ভূপ্রকৃতি কী ভাবে তৈরি হয়েছে, কী কী উপাদানে চাঁদের মাটি তৈরি, চাঁদের মাটিতে কোন ধরনের খনিজ বস্তু আছে– এ সংক্রান্ত বার্তাই পাঠাবে ‘প্রজ্ঞান’।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। শুরুতে চাঁদের দক্ষিণ অংশে অবতরণ করবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। বিক্রম সফলভাবে অবতরণ করতে পারলে তা ‘প্রজ্ঞান’ রোভারকে চাঁদের মাটিতে ছাড়বে। এই রোভারই তখন চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে। আর নতুন সব তথ্য পাঠাতে থাকবে পৃথিবীতে।